কুড়িগ্রামের রৌমারীতে মৃত্যু দুস্থের ১১ মাসের ভিজিডির চাল আত্মসাত করার অভিযোগের পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার এক মাস পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রহস্যজনকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদনে চাল আত্মসাতের বিষয়টি সত্য এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চুপ করে বসে আছেন। অভিযোগকারী বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করছেন।
জানা গেছে, উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চরগয়টা পাড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের স্ত্রী রেজিয়া খাতুন মৃত্যুবরণ করেন ২০১৫ সালের ২৮ জুলাই তারিখে। রেজিয়া খাতুন দুস্থ হিসেবে ভিজিডি সুবিধাভোগী পরিবার, যার কার্ড নং-২৪০, মাস্টার রোলের ক্রমিক নং ১৫৭। মারা যাওয়ার পর রেজিয়া খাতুনের নামের চাল ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১৬ মাসের মধ্যে ১১ মাসের বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক। বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর গত বছর ১৩ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নিহত দুস্থের ভাই মোকছেদ আলী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামকে। তদন্ত কর্মকর্তা গত ৫ ডিসেম্বর তদন্ত শুরু করেন। এতে অভিযোগকারীসহ পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেন। অভিযুক্তদের লিখিত বক্তব্যে ওই দুস্থের ১১ মাসের ৩৩০ কেজি চাল আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। তদন্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম তদন্তে প্রমাণ রয়েছে- এমন বিষয় উল্লেখ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন গত ১৮ ডিসেম্বর। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘দুস্থের চাল আত্মসাতের প্রমাণ সংবলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। যা ব্যবস্থা নেয়ার সেটা ইউএনও স্যার নিবেন।’
অভিযোগকারী মোকছেদ আলী বলেন, ‘চাল আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ইউএনও স্যার নানা তালবাহানা করছেন। তিনি অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বাড়িতে একাধিকবার দাওয়াত খেয়েছেন। শুনেছি, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধাও নিয়েছেন তিনি। এ কারণে দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বিষয়টা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। চেয়ারম্যানও নানাভাবে আমাকে হুমকি দিয়ে বিষয়টা মীমাংসার কথা বলছেন।’
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযুক্তদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। সে হিসেবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবো।’ এতে আরো কতদিন সময় লাগতে পারে- এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নানা কাজে ব্যস্ত। বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে রাজীবপুর উপজেলারও।’
বিডি-প্রতিদিন/২৫ জানুয়ারি, ২০১৬/মাহবুব