অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপুষ্টি, শিক্ষা, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন মৌলভীবাজারের হাওর পারের মানুষ। আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে। এ সব কারণে বছরের প্রায় সময় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন হাওর এলাকার দরিদ্র মানুষ। যদিও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কাজ করেছে তাদের জীবন মান উন্নত করার জন্য। কিন্তু শহর এবং অন্যান্য গ্রামের তুলনায় হাওর পারে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার সুযোগ সৃষ্ঠি না হওয়া অসচেতনতার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।
জেলার বড়লেখা, জুড়ি, কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত ২৭ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমি নিয়ে দেশের বৃহৎ হাওর হাকালুকি, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৬,৪০০ হেক্টর জমি নিয়ে হাওর কাউয়া দীঘি, মৌলভীবাজার সদর ও শ্রীঙ্গল উপজেলার ১১,৬০০ হেক্টর জমি নিয়ে হাইল হাওর সহ জেলায় রয়েছে ছোট বড় মোট ছয়টি হাওর। ছয়টি হাওরের মোট আয়তন ৪৮ হাজার ২৮ হেক্টর । হাওর পারের প্রায় গ্রামগুলো দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যবস্থা নিতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগ।
সরেজমিনে জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাওর হাকালুকির পারের সাদি পুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেকের রান্না ঘরের পাশে অস্বাস্থকর খোলা পায়খানা, পুকুরগুলোর একদিকে ময়লা আবর্জনা ফেলছেন অন্যদিকে এই নোংরা পানিতেই গোসল করছেন অনেকেই এবং ধৌতকরছেন খাবারের জিনিস। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ পরিবার মিলে ব্যবহার করছেন একটি মাত্র টিউবওয়েল। লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিচ্ছেন আনেকেই। এমনকি দেখা যায় অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছেন হাম-রুবেলাসহ বিভিন্ন রোগে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন হাওর পারের প্রায় গ্রামগুলোতে দেখা যায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশসহ একই সমস্যা।
হাওর হাকালুকির পারের সাদিপুর গ্রামের শিরিনা বেগম বলেন, 'আমরা গরিব মানুষ টাকার আভাবে টিউবওয়েল বসাতে পারিনা তাই অন্যের বাড়ি থেকে কষ্ট করে বিশুদ্ধ টিউবওয়েলের পানি আনতে হয়। আমরা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ পরিবার মিলে একটি টিউবওয়েল ব্যবহার করি। তাই আনেক সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিতে হয়। আমাদের এলাকায় বিশুদ্ধ পানির খুব অভাব।'
একই এলাকার বৃদ্ধ ইছমেদ আলী বলেন, 'আমরা ৩০ পরিবার বাস করি একসাথে, আমাদের বাড়িতে কোন টিউবওয়েল নাই। অন্যের বাড়ি থেকে পানি আনতে হয়। এমনকি আমাদের পর্যাপ্ত স্বাস্থকর স্যানিটেশন নেই।’
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন সত্যকাম চক্রবর্তী বলেন, হাওর এলাকা একটি দুর্গম এলাকা বলে পুষ্টিহীনতা একটি প্রধান কারণ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের ধারণা আনেক কম। যে কারণে তারা বিভিন্ন সময় স্বাস্থঝুঁকিতে থাকেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমন একাট ঝুঁকি যা হাওর এলাকায় সবসময় থাকে। এব্যাপারে আমরা অবগত আছি এবং আমার ধারণা আমরা যে কর্ম কৌশল গ্রহণ করছি তা অচিরেই সমাধান হবে।
বিডি প্রতিদিন/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/হিমেল