কক্সবাজারে পুুলিশের বিরুদ্ধে এক নারী আসামি তার স্পর্শকাতর অঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। নির্যাতনের শিকার জীবন আরা নামের ওই নারী পুলিশ সদর দপ্তর ও জেলা পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়া মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলন করেও তিনি এ অভিযোগ করেছেন।
ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক হওয়া জীবন আরা জামিনে মুক্তি পেয়ে মঙ্গলবার কক্সবাজার প্রেসক্লাবে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন। তিনি জানান, রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ তার স্তন ও গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ গত ২ মার্চ তিনি ও তার স্বামী আলী আহমদ কোম্পানীকে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে আটক করে আদালতে প্রেরণ করে। আদালত তাদের প্রেরণ করেন জেল হাজতে। ২৩ মার্চ জামিনে বের হয়ে জীবন আরা এসআই মানস বড়ুয়ার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়ান।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৩ মার্চ রাতে রিমান্ডের নামে সদর থানায় নিয়ে গিয়ে তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। জীবন আরার ব্যবসায়ীক প্রতিপক্ষ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসআই মানস বড়ুয়া শরীরের বিভিন্নস্থানে বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার সহ পুলিশ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। পাশাপাশি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরও লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
অভিযোগে তিনি আরো জানান, চলতি বছরের ২ মার্চ তাকে ও তার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় আটক করে। তার ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ ঢাকার পশ্চিম উত্তরার কামালপাড়ার সিরাজুল হকের স্ত্রী সীমা আক্তারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সেদিন তাদের দুজনকে ইয়াবাসহ আটক দেখায় পুলিশ। এরপর তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়। জেল হাজতে পাঠানোর দশদিন পর তাকে রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডের দিন এসআই মানস তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। সেই টাকা তিনি দিতে অস্বীকার করলে এসআই মানস তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।
এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত জীবন আরা জানান, এসআই মানসের নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা তার জানা নেই। পুলিশ যে কতটা পাষন্ড ও বর্বর হতে পারে তার উদাহারণ মানস। তিনি এখনো মানসের নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন।
নির্যাতিত এই নারী জানান, আটকের দিন পুলিশ তার বাসা থেকে ব্যাংক চেক, স্বর্নালংকার ও একটি প্রাইভেট কার নিয়ে আসে। বর্তমানে সেসব জিনিসের হদিসও তার জানা নেই। কারাগার থেকে বের হয়ে নির্যাতনের বিরুদ্ধে সঠিক বিচার পেতে সহায়তার জন্য তিনি কক্সবাজার ঝাউতলা নারী কল্যাণ সমিতিতে যান। সেখান থেকে কথা বলে ফেরার পথে পুলিশ আবারও তার উপর হামলা করে। ওই সময় নুনিয়ারছড়া এলাকায় ইট দিয়ে আঘাত করে তার দেবরের পা ভেঙ্গে দেয় এসআই মানস।
সংবাদ সম্মেলনে ঝাউতলা নারী কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফাতেমা আনকিজ ডেজী জানান, নির্যাতিত নারীকে নিয়ে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। এছাড়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদে চৌধুরীর সহযোগিতায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, ওই নারী শরীরের সর্বত্র ক্ষতের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই তার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে নারী কল্যাণ সমিতি প্রয়োজনে রাস্তায় নামবে।
এদিকে অভিযুক্ত এস আই মানস বড়ুয়া জানান, অভিযোগকারী নারী জীবন আরা সদর থানার একটি নিয়মিত মামলার আসামি। সেই হিসেবে ১৩ মার্চ তাকে এক দিনের রিমান্ডে আনা হয়। কিন্তু সেখানে তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি। জীবন আরা তার অপরাধ ঢাকার জন্য ষড়যন্ত্র করছেন এবং তার (মানস) বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এই অভিযোগের তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, অভিযোগটি তদন্তের স্বার্থে অভিযোগকারিকে তার স্বপক্ষের স্বাক্ষীসহ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আগামি ২১ এপ্রিল হাজির হতে বলা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/১৮ এপ্রিল ২০১৭/হিমেল