নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে চলছে বাগদা ও গলদা চিংড়ি রেণু শিকারের মহোৎসব। গ্রীষ্মের ৩ মাস এ জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১৫ কোটি টাকার রেণু সরবরাহ করা হচ্ছে। এইসব রেণু ধরতে অসচেতনভাবে জেলেরা ধ্বংস করছে শত কোটি টাকার অর্ধশতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ডিম-রেণু। পরিবেশবান্ধব জলজ প্রাণি মারা যাচ্ছে তাদের জালে।
স্থানীয়দের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা অব্যাহত রেখেছে রেণু শিকার। অবশ্য ম্যানেজের বিষয়টি অস্বীকার করে রেণু ধরা বন্ধে যৌথ অভিযান চলছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। এদিকে প্রাণি বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলজ প্রাণি রক্ষায় প্রাকৃতিক উৎস থেকে বেপরোয়া রেণু শিকার বন্ধ করা দরকার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদরের মজুচৌধুরীর হাটের বুড়ির ঘাট এলাকা থেকে রামগতির শেষ সীমানা পর্যন্ত মেঘনা নদীতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে চিংড়ির রেনু পোনা (গলদা চিংড়ি) শিকার করা হচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু ও নারী-পুরুষ মশারি জাল ও বিহিন্দী জাল দিয়ে এসব রেনু শিকারের মহোৎসবে মেতে উঠে। একেকজন শিকারী কখনো ১০০ থেকে ১৫০ আবার কখনো ২০০ থেকে ৩০০টি চিৎড়ির রেনু শিকার করেন। আর প্রতিটি বাগদা অথবা গলদা চিংড়ির রেণু দুই টাকা করে বিক্রি করেন বলে জানান তারা। শিকারীদের কাছ থেকে স্থানীয় আড়ৎদাররা তা কিনে নেন।
মেঘনার তীরে অন্তত শতাধিক টং ঘর নির্মাণ করে আড়ৎদাররা জেলেদের কাছ থেকে রেণু সংগ্রহ করে তা নদী পথে কিংবা সড়ক পথে খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের চিংড়ি ঘেরের মালিকদের কাছে তা বিক্রি করেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরুতেই ঘের মালিকরা দালালের মাধ্যমে শিকারিদের দাদন দিয়ে থাকেন। ওই দাদন নিয়ে প্রতিদিন মেঘনায় রেণু শিকার করে তারা।
কমলনগর উপজেলার বাত্তির খাল এলাকার চিংড়ি রেণু ব্যবসায়ী মো. নাছির উদ্দিনসহ একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, লক্ষ্মীপুরের মেঘনার পাড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লাখ রেণু বেচা কেনা করা হয়। অবৈধ ব্যবসা হওয়া সত্বেও জীবন জীবিকার তাগিদে তারা এ ব্যবসা করেন। এছাড়া ঘাটে ঘাটে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টাকা দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান তারা। এসব ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে ৩ মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকার রেনু পোনা বিক্রি হচ্ছে এ জেলায়।
এদিকে সচেতন এলাকাবাসী জানান, এখানকার জেলেরা অসচেতন হওয়ায় তাদের জালে ধরা পড়া চিংড়ির রেণুগুলো রেখে অন্যান্য মাছের রেণু ও ডিম মাটিতে ফেলে দেয় জেলেরা। এতে করে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মাছের রেনু পোনা ধ্বংস হয়ে জেলায় শত কোটি টাকার মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। এসব নিষিদ্ধ রেনু পোনা স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ধরা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্লাহ ম্যানেজের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মৎস্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত আছে। চিংড়ি পোনা ধরতে গিয়ে ৫০টি প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে বলে স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা।
এদিকে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের প্রাণি বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক নাছিমা আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রেণু ধরতে গিয়ে অন্যান্য মাছের রেণু ও ডিম নষ্ট করায় অর্থনৈতিক ও পরিবেশ উভয়ের ক্ষতি হচ্ছে। এ অঞ্চলের জেলেদের সাময়িকভাবে আয়ের সুযোগ হলেও এর ফলে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ সংগ্রহ পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। জলজ প্রাণি রক্ষায় প্রাকৃতিক উৎস থেকে বেপরোয়া রেণু শিকার বন্ধ করা দরকার বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/১২ মে ২০১৭/হিমেল