ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীর পায়রা নদীর উপর নির্মাণাধীন পায়রা সেতু এখন দৃশ্যমান। গত ১৪ মাসে সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ১৩ ভাগ। পিলার দাঁড়িয়েছে ১০টি। চলতি মাসে দৃশ্যমান হবে আরো ৯ পিলার। নদীর দুই তীরে দিনরাত ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন দেশি-বিদেশী প্রকৌশলী-শ্রমিক-কারিগররা। কাজের পরিবেশেও সন্তুষ্ট চীন-ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা। নির্মাণাধীন সেতু জাঁগিয়ে তুলেছে পুরো এলাকার মানুষের দির্ঘদিনের স্বপ্ন। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেই সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আশা সংশ্লিস্ট প্রকৌশলীদের।
একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখার বিরল সুযোগ সমূদ্র সৈকত কুয়াকাটায়। এ কারণে বিশ্বের অনেক পর্যটন স্পটের চেয়ে সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটার আলাদ কদর রয়েছে পর্যটকদের কাছে। কিন্তু সড়ক পথে কুয়াকাটা যেতে ঝক্কি ঝামেলার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতেন অনেকে। আগে বরিশাল থেকে কুয়াকাটায় যেতে ৬টি পয়েন্টে পাড় হতো হতো ফেরী। বিগত কয়েক বছরে ৫টি পয়েন্টে ফেরী হওয়ায় দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হলেও পুরোপুরি কাটেনি।
বরিশাল ও পটুয়াখালীর সিমান্তবর্তী পায়রা নদী পয়েন্টের ফেরী পাড় হতে যানবাহনগুলোকে এখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় বলে জানিয়েছেন বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন ও ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়ন বিভাগীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মাসুম খন্দকার। ব্রিজের কাজ সম্পন্ন হলে এই সড়কে চলাচলে মানুষের আর ভোগান্তি পোহাতে হবেনা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. মিন্টু।
গত বছরের জুলাই মাসে কুয়েত সরকারের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ২৬তম কিলোমিটারে লেবুখালী পয়েন্টে পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে বর্তমান সরকার। দিনরাত কর্মে মুখর পায়রা নদীর দুই তীর। সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় খুশির জোয়ার বইছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম।
বাকেরগঞ্জের লেবুখালীর প্রবীন আসলাম গাজী বলেন, পায়রা নদীতে সেতু হবে- এটা তাদের দির্ঘদিনের স্বপ্ন ছিলো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে ওই এলাকার মানুষের জীবন-মানের অনেক উন্নতি হয়েছে। বেড়ে গেছে জমির দাম।
১ হাজার ৪শ’ ৭০ মিটার দির্ঘ এবং ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট পায়রা সেতু নির্মিত হচ্ছে পর্যটনের কথা বিবেচনায় রেখে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর আদলে এক্সটা ডোজ কাবল স্টেট পদ্ধতিতে। চার লেন বিশিষ্ট সেতু নির্মানের কাজ করছে চীনের লং জিয়ান রোড এন্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানী লিঃ।
পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্রীজ ইঞ্জিনিয়ার মো. মাসুদুর রহমান জানান, দেশী-বিদেশী শ্রমিক-কারিগর এবং প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা দিনরাত পালাক্রমে কাজ করছেন। সেতুর কাজের মান শতভাগ নিশ্চিত করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। এখানকার কর্ম পরিবেশেও প্রকল্পে কর্মরত বিদেশীরা খুশি বলে তিনি জানান।
পায়রা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক আবাসিক প্রকৌশলী মনজিত কুমার সাহা জানান, রবিবার পর্যন্ত পায়রা সেতুর ১৩ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর উত্তরপ্রান্তে ইতিমধ্যে ১০টি পিলার দৃশ্যমান হয়েছে। উত্তর পাশে আরো দুটি পিলার নির্মাণের লক্ষ্যে পাইল স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে উত্তরপ্রান্তে মোট ১২টি পিলার দৃশ্যমান হবে। সেতুর দক্ষিণ প্রান্তেও পাইল স্থাপনের কাজ চলছে। চলতি মাসের মধ্যে উত্তরপ্রান্তে ৭টি পিলার দৃশ্যমান হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বরে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আশা করছেন আবাসিক প্রকৌশলী মনজিত কুমার সাহা।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন