রাঙামাটিতে মাসজুড়ে চলছে সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে শহরের কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় বসেছে হরেক রকম মেলা। তাই জমে উঠেছে পাহাড়ে এ উৎসবের মেলা। একদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের চীবর দান উৎসব, অন্যদিকে সনাতন ধর্মালম্বীদের জগদ্বাত্রী পূজা। সবমিলে রাঙামাটি এখন উৎসবের নগরী।
সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলন ক্ষেত্র। এ মেলায় স্থান পেয়েছে প্রায় অর্ধ-শতাধিক ছোট বড় নানা বাহারি স্টল। সেখানে খই-বাতাসা, মিঠাই, বেলুন, শিশুদের খেলনা, নারীদের শাড়ি চুড়ি ও মাটির পুতুল প্রসরা সাজানো হয়েছে। এছাড়া মেলায় মিলছে ঘর সাজানোর বিভিন্ন জিনিসপত্র। তাই ব্যস্ত সময় কাটছে দোকানিদের। মূল আকর্ষণ হচ্ছে নাগরদোলা।
উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নাগর দোলায় আনন্দে মেতে উঠছে। আর নানা রঙের আলোক সজ্জায় সজানো হয়েছে পুরো মেলাস্থল। বসানো হয়েছে উৎসবের আসর। এ মেলায় রাতদিন চলছে আনন্দের হোলি আর কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও পণ্য প্রদর্শনী।
জানা গেছে, গত শনিবার রাঙামাটি সনাতন ধর্মালম্বীদের জগদ্বাত্রী পূজা উপলক্ষে বসানো মেলা শেষ হচ্ছে বুধবার। তবে পূজা শেষ হলেও শেষ হচ্ছে না মেলার আমেজ।
বৃহস্পতিবার রাঙামাটি রাজবন বিহার এলাকায় কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে আবারও শুরু হচ্ছে এ মেলা উৎসব।
রাঙামাটি জগদ্ধাত্রী মাতৃ মন্দির সাধারণ সম্পাদক স্বপন কান্তি মহাজন জানান, দেবী জগদ্বাত্রীর পূজা উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তার মধ্যে চন্ডীপাঠ, গীতাপাঠ, আরতি, ষোড়শপ্রহর ব্যাপী মহানামযজ্ঞ। তার পাশাপাশি চলছে মেলা। কারণ রাঙামাটি সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রাচীন ঐতিহ্য জগদ্বাত্রী পূজা মেলা। এ মেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ সমাবেতর হয়। ঢল নামে হাজর হাজার পূর্ণার্থীর। মেলা দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজারো পর্যটক।
অন্যদিকে, গত ১৩ জুন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাহাড় ধসের কারণে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে রাঙামাটি। আনন্দ হারিয়ে ফেলে এ অঞ্চলের মানুষ। তবে বেশ কয়েকদিন ধরে মেলা আর উৎসবের আবারও প্রাণ চঞ্চলতা ফিরে এসেছে পাহাড়ে। মেলা ছুটছে সব বয়েসের নারী-পুরুষ। সন্ধ্যা হলে তিল পরিমাণ জায়গা খালি থাকে না মেলাস্থলে। নামে হাজার হাজার মানুষের ঢল।
প্রধান সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে বসা এই মেলা ক্রেতা ও দর্শণার্থীদের টানছে সহজেই। যানবাহনের বিড়ম্বনা না থাকায় বিকেল হতেই দর্শণার্থী আর ক্রেতায় জমজমাট হয়ে উঠছে মেলা প্রাঙ্গন। পছন্দের পণ্যের দাম হাতের নাগালে থাকায় বেড়েছে বিকিকিনি। তাই খুশি ক্রেতা ও বিক্রেতারা। মেলায় শিশুদের খেলনা, গৃহস্থালী জিনিসপত্র, শাড়ি, চুড়ি ও প্রসাধনী নিয়ে বসেছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রাঙামাটিতে জগদ্ধাত্রী ও চীবর দানোৎসবের মেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ সমাগম হয়। মেলাকে ঘিরে যাতে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আছে সাদা পোশাকে পুলিশও। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/৩১ অক্টোবর ২০১৭/আরাফাত