নকলে নাকাল অবস্থা ঝালকাঠির নলছিটি। প্রবাদ বাক্যে আছে, হারি-জিতি নাহি লাজ, দশে মিলে করি কাজ। এবার নলছিটিতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার হলগুলোতে এমন চিত্র মিলছে। চলতি জেএসসি পরীক্ষায় উপজেলায় পাঁচটি পরীক্ষা কেন্দ্র ঘুরে নকলের এমন ভয়াবহ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
নকলে সহায়তার জন্য রবিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশ্রাফুল ইসলাম উপজেলার বি.জি ইউনিয়ন একাডেমি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করেন।
বহিষ্কৃত শিক্ষকরা হলেন- কুশঙ্গল বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৃণাল কুমার মন্ডল ও ডেবরা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন।
রবিবার ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষায় বি.জি ইউনিয়ন কেন্দ্রে ভিডিওধারণ করা চিত্রে দেখা গেছে, পরীক্ষার হলগুলোতে দায়িত্বরত শিক্ষকরা ছোটাছুটি করছেন। আগাম সতর্কবার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন পরীক্ষার্থীদের কাছে। কেন্দ্রগুলোর প্রতিটি কক্ষেই পরীক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছ থেকে সরবরাহকৃত নকল করেই পরীক্ষা দিচ্ছে। বিভিন্ন কক্ষের পর্যবেক্ষকগণ ম্যানেজ হয়েই কেন্দ্রে প্রবেশ করেন।
বেলা ১২টার দিকে ইউএনও আশ্রাফুল ইসলাম ওই পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন যান। এসময় নকলে সহায়তার দায়ে দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করেন তিনি। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন স্কুল থেকে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের যাতায়াত সুবিধা, ভালো খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ও নগদ উৎকোচ প্রদান করে স্বার্থ আদায় করা হচ্ছে। স্বার্থটি হচ্ছে- পরীক্ষার্থীদের নকল ও দেখাদেখি করার সুযোগ দেয়া।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নলছিটি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, নলছিটি ডিগ্রী কলেজ ভেন্যু ও নলছিটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে চিত্র একই।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক অভিভাবক জানান, পরীক্ষায় নকল করার সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে স্কুলের শিক্ষক ও অফিস সহকারীরা প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নিয়েছেন। কয়েকজন শিক্ষক পরীক্ষা শুরুর আগে মুঠোফোনে নৈর্ব্যক্তিক ও রচনামূলক প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা বাইরে নিয়ে যান। পরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকরা সঠিক উত্তর লিখে তা পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করেন।
কেন্দ্রে নকল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বি.জি ইউনিয়ন একাডেমি কেন্দ্রের ইলেন ভুট্টো বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভেন্যুতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, নকলের এমন দৃশ্য আমার চোখে পড়েনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, নকল প্রতিরোধে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যেসব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে আমরা সেসব কেন্দ্রের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ইতিমধ্যে বি.জি ইউনিয়ন একাডেমি কেন্দ্রে নকলে সহায়তার দায়ে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/০৫ নভেম্বর ২০১৭/আরাফাত