নাটোর ছাত্রলীগ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ।অপরদিকে বিএনপি নেতা দুলু'র বাসভবন ও জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ও গুলি বর্ষণ এবং বিএনপি নেত্রী ছাবিনা ইয়াছমিন ছবি'কে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে জেলার লালপুর,নলডাঙ্গা ,বড়াইগ্রামের রাজাপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ।
এদিকে একই ঘটনার প্রতিবাদে সিংড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পুলিশের বাধায় পন্ড হয়ে গেছে।
সোমবার সকাল ১০টায় দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে সিংড়া থানার ওসি (তদন্ত) নেয়ামতের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স মিছিলে বাধা দেয়। বিএনপি নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিক দলীয় কার্যালয়ে এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন। নাটোরে ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে ছাত্রলীগের সম্পাদক সহ দুইজন গুলিবিদ্ধর ঘটনায় দুলুর সহধর্মীনি ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন ছবি সহ ২৪জনের নামে সদর থানায় একটি এজাহার দাখিল করা হয়েছে।
রবিবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলার এজাহার দায়ের করেন। তবে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা রেকর্ড হয়নি।
পুলিশ ও দলীয় সূত্র জানায়, রবিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাজশাহী বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্ত্রী জেলা বিএনপির সহ- সভানেত্রী ছাবিনা ইয়াসমিন ছবি দলীয় নেতা কর্মিদের নিয়ে সিংড়া উপজেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির পরিচিত সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেন। এসময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মিরা ১০-১৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে অতর্কিত ভাবে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তারা দুলুর বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। পরে মোটর সাইকেলবহরটি নাটোর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের মোড়ে উপস্থিত হয়ে বিএনপি নেতা কর্মিদের লক্ষ্য করে হামলা চালালে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষ থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। এতে নাটোর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুবেল ও অটোবাইক যাত্রী আনসার সদস্য সোহেল রানা আহত হন। পরে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রবিবারের সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুবেলসহ দুইজন গুলিবিদ্ধ হবার প্রতিবাদে ও দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবীতে সোমবার বিকেলে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ অংগঠনের কর্মীবৃন্দ। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নাটোর প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ এক পথসভা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে আওয়ামী লীগের বিক্ষুদ্ধ কর্মীরা বলেন, নাটোরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে নষ্ট করে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ছাত্রলীগের কর্মীদের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতরা বিভিন্ন মামলার আসামী। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার না করলে কঠোর আন্দোলনে নামবে ছাত্রলীগ-যুবলীগ।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. সিরাজুল ইসলাম পিপি,জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তুজা আলী বাবলু, যুবলীগের সভাপতি রুহুল আমিন বিপ্লব, সদর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহানুর রহমান সুরুজসহ অরোও অনেকে ।
এদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপমন্ত্রী এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, নাটোরে আওয়ামী লীগ নিজদলের নেতাকর্মীদের নিজেরা খুন-জখম করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর সংস্কৃতি নতুন নয়। প্রয়াত শ্ঙকর গোবিন্দ চৌধুরীর মৃত্যুর পর থেকে আমার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য নিজদলের নেতাকর্মী খুন জখম করে বিএনপি’র ঘাড়ে দোষ চাপানোর যে রাজনীতি তারা শুরু করেছিল ।তা আজো অব্যাহত আছে । কালকের ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ । ছাত্রলীগ নেতা রুবেল নিজের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে আহত হয় । এঘটনা মিথ্যা বলেই থানা তাদের মামলা নেয়নি ।
বাসভবন ও দলীয় কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপি নেতাকর্মিরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা চলাকালে মুঠোফোনে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।
সোমবার বিকালে নলডাঙ্গা বাজারে উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আতিকুর রহমান তালুকদারের নেতৃত্বে এ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।বিক্ষোভ মিছিলটি নলডাঙ্গা বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে উপজেলা কার্যালয়ের মোরে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন,নলডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি এম এ হাফিজ,উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিল্লুর রহমান,জেলা শ্রমিকদলের সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বুলবুল ।
এই ঘটনায় রবিবার রাতেই জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম বাদী হয়ে সদর থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। এজাহারে বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্ত্রী এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছাবিনা ইয়াসমিন ছবিকে হুকুমের আসামী করা হয়। এছাড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেওয়ান শাহীন, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই তালুকদার ডালিম, সাবেক কাউন্সিলর যুবদল নেতা সেদরুল হুদা ডাম্বেল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ রনি, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সম্পাদক সোহেল হোসেন সহ মোট ২৪জন।
এবিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত এজাহার দাখিল করেছেন। তবে এজাহার এখনও রেকর্ড হয়নি। মামলার রেকর্ড করার জন্য পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত এজাহার দাখিল করেছেন। তবে এজাহার এখনও রেকর্ড হয়নি। মামলার রেকর্ড করার জন্য পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/ ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান