টাঙ্গাইলের সোনিয়া নার্সিং হোমে বিলকিস আক্তার (৩৫) নামের এক গৃহবধূকে অপারেশন করতে গিয়ে গলা কেটে হত্যার পর পালিয়ে গেছে সরকারী চিকিৎসক ডা: এম.এম. মনিরুজ্জামান।
সে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইএনটি। লাশ কাটা-ছোড়া সহ বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে সমঝোতায় বাধ্য করার অভিযোগ নিহত গৃহবধূর আত্মীয় স্বজনদের। গৃহবধূর সাফিয়া নামে আট ও সাব্বির নামের নয় বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। গৃহবধূর বাড়ি সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের চৌবাড়ীয়া গ্রামে।
সে রবিবার দুপুর দুই টার দিকে ঠাণ্ডা জনিত কারণে গলায় টনসিল অপারেশন করার জন্য শহরের নতুন বাস স্ট্যান্ডের সোনিয়া নার্সিং হোমে ভর্তি হন। পরে বিকেল ৪টায় তাকে অপারেশন থিয়েটার কক্ষে নেয়া হয়। বিকেল ৫টায় অপারেশন শুরু করেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর অপারেশন কক্ষ থেকে বের করে ভাড়া কৃত কক্ষের বেডে আনা হয়। এসময় তার হাতে স্যালাইন লাগানো থাকলেও তা বন্ধ ছিল। গলায় ব্যান্ডিস করা থাকায় সেখানে কেউ হাত লাগাতে পারেনি। শরীর ও হাত-পা ঠাণ্ডা ছিল।
এ ব্যাপারে স্থানীয় নার্সদের জিজ্ঞেস করলে তারা স্যালাইন ঝাকতে থাকেন আর বলেন অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়েছে, জ্ঞান ফিরলে সব ঠিক হয়ে যাবে। পরে স্বজনরা বিভিন্ন ভাবে তাকে ডাকা-ডাকি করলে কোন প্রকার সাড়া মিলেনি। গলার ব্যান্ডিসের ফাকে হাত লাগাতেই রক্ত জমাট বাধা অবস্থায় বড় ধরনের কাটা দেখা যায়। এরপর মূহুর্তের মধ্যে নার্সিং হোম ফাকা হয়ে যায়। দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রোগীর কোন প্রকার নড়া-চড়া না করায় নার্সদের ডাকতে থাকেন স্বজনরা। এসময় কোন নার্স না থাকায় তারা কর্তৃপক্ষকে খোঁজ করেন। তারাও অনুপস্থিত থাকায় নার্সিং হোমের অন্য এক কর্মকর্তা নিচে থেকে উপরে গিয়ে দুই ঘণ্টা পূর্বে মারা গেছেন বলে তাদের নিশ্চিত করেন। এ খবর ছড়িয়ে পরলে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। পরে ঘটনাস্থলে টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ ও মিনিবাস মালিক সমিতির এক নেতার সাথে নিয়ে সোনিয়া নাসিং হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম রেজভী একটি কক্ষে বসেন। পরে সেখানে উপস্থিত হন টাঙ্গাইল জেলা ক্লিনিক ও নার্সিং হোম মালিক সমিতির সভাপতি শিবলী সাদিক।
দীর্ঘ দুই ঘণ্টা গোপন বৈঠকের পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে নিহত গৃহবধূর স্বামী সাইফুল ইসলাম ও কাতুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনকে হাজির করা হয়।
এসময় নিহতের স্বামী সাইফুল ইসলাম জানান, আমার স্ত্রী মারা গেছে এটা তার কপালে ছিল। যে গেছে সে তো চলেই গেছে। আমি তার লাশ কাটা ছেড়া করতে চাই না। অথচ এর এক ঘন্টা পূর্বে তিনি তার সকল আত্মীয় স্বজনদের ফোনের মাধ্যমে ডেকে এনে বলেছেন চিকিৎসক ও নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ যোগসাজসে আমার স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করেছে আমি এর বিচার চাই। বিচার না হওয়া পর্যন্ত লাশ এখানেই থাকবে। তাৎক্ষণিক মত পরিবর্তন হওয়ায় বিষয়টি সংবাকর্মীদের নজরে আসে।
কাতুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বাীকার করে জানান, নিহতের দুটি সন্তানের জন্য কিছু টাকা নিয়ে সমঝোতা করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে নিহতের মরদেহ স্থানীয় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এ সময় সোনিয়া নাসিং হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম রেজভী সংবাদ কর্মীদের কোন কথা বলতে নারাজ থাকলেও টাঙ্গাইল জেলা ক্লিনিক ও নার্সিং হোম মালিক সমিতির সভাপতি লায়ন এম শিবলী সাদিক ঘটনার সত্যতা স্বাীকার করে বলেন, এ ঘটনার জন্য আমরা অনুতপ্ত।
অভিযুক্ত চিকিৎসক টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ই.এন.টি ডা: এম.এম. মনিরুজ্জামান-এর সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন