টাঙ্গাইল শহর যানজট মুক্ত হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ ও পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা দুই ভাগে সকাল-বিকাল লাল-হলুদ স্টিকারে চলাচলের উদ্যোগ নেয়ায় শহর যানজটমুক্ত হয়েছে। তবে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ভাঙা রাস্তাগুলো মেরামতের উদ্যোগ না নিয়ে অটো চলাচল অর্ধেক করায় অনেকেই ক্ষুদ্ধ। অনেক অটো চালকের আয় অর্ধের নিচে নেমে এসেছে। তাদের আয় বাড়াতে অল্প সময়ে অনেক জায়গায় ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানায়, শহরে চলাচলের জন্য পৌরসভা তিনহাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার লাইসেন্স দিয়েছিল। কিন্তু শহরে চলাচল করতো আট হাজার অটো। এতে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকতো প্রতিটি রাস্তায়। যানজট থেকে মুক্তি পেতে পুলিশ ও পৌরসভা একাধিক বৈঠক করে লাইসেন্সবিহীন অটোরিক্সা শহর থেকে সরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু রাজনৈতিক চাপ এবং অটোরিক্সার মালিক শ্রমিকদের আন্দোলনের হুমকির মুখে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
গত মার্চে যোগদানের পর টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সুঞ্জিত কুমার রায় যানজট সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন বলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে জানান। তার অংশ হিসেবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ শহরের অবৈধ অটোরিক্সার দোকান সিলগালা করে দেয়। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স দেয়া তিনহাজার অটোর দেড়হাজার অটোতে হলুদ স্টিকার এবং দেড় হাজার অটোর লাল স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়। লাল স্টিকারযুক্ত অটোরিক্সা সকাল থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত এবং হলুদ স্টিকারযুক্ত অটোরিক্সা দুপুর দুইটা থেকে রাত পর্যন্ত চলাচলের সময় বেঁধে দেয়া হয়।
গত ১ এপ্রিল থেকে এ ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ায় পাল্টে গেছে শহরের চিত্র। আগে শহরের সন্তোষ এলাকা থেকে নিরালার মোড় আসতে ৪০/৫০মিনিট সময় লেগে যেতো। এখন সেখানে সময় লাগছে ১০ থেকে ১৫মিনিট।
এদিকে অটো রিক্সার ভাড়া কয়েকটি স্থানে ৫টাকার স্থলে বাড়িয়ে ১০টাকা করা হয়েছে। দিঘুলিয়ার আসাদ বলেন, পৌরসভার রাস্তাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ করা হয় না। যার কারণে প্রত্যেকটা রাস্তাই ভাঙ্গা, চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। সম্প্রতি ড্রেন ও রাস্তা সংস্কারের নামে বন্ধ হয়ে রয়েছে পৌরসভার সকল রাস্তা। একটি সড়কে সব যান চলাচল করায় যানজট লেগেই থাকে। তারপরও রাস্তা প্রশস্তকরণ ও পৌরসভার রাস্তা ঠিক করার নাম নাই। জোরপূর্বক অটো চলাচল বন্ধ করে যানজট নিরসন করা হয়েছে। ভাড়া বেড়েছে যাতে সাধারণ জনগণেরই ক্ষতি হয়েছে।
তবে শহরে যানজট না থাকায় অনেক মানুষই খুশি। অটো চালক কুদ্দুস বলেন, অবৈধ অটো চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় তারা এখন যাত্রী বেশি পাচ্ছেন। তাছাড়া বৈধ অটো দু’ভাগে চলাচল করায় যানজট কমে গেছে। শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রোস্তম আলী বলেন, অটো জটের কারণে শহরের রাস্তায় চলাচল করা খুব কষ্ট হতো। যানজটে আটকা পড়তে হতো প্রতিটি মোড়ে। নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এখন আর সে দুর্ভোগ নেই।
টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম সরকার জানান, শহরের যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশকে হিমশিম খেতে হতো। অবৈধ অটো শহরে প্রবেশ বন্ধ করায় এবং বৈধ অটো দু’ভাগে চলাচলের ব্যবস্থা করায় ম্যাজিকের মতো কাজ হয়েছে। শহরে এখন যানজট নেই বললেই চলে। পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ৪০ জন ট্রাফিক পুলিশ শহর যানজটমুক্ত রাখার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে। অটোরিক্সার মালিক ও শ্রমিকরাও এই যানজট নিরসনে সহায়তা করছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরন জানান, শহরের অন্যতম সমস্যা ছিল যানজট। পুলিশ বিভাগের সহায়তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রণ করে শহর যানজটমুক্ত করা গেছে। এ অবস্থা যাতে টিকে থাকে সেজন্য শহরবাসীকেও সহায়তা করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/৮ এপ্রিল, ২০১৮/ফারজানা