নানা সংকটের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে রাঙামাটি চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিলস (কেপিএম)। দীর্ঘদিনের লোকসান কাটিয়ে আর্থিক সমস্যা নিরসনে নেয়া হয়েছে নানা উদযোগ। প্রায় সময় শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকলেও এখনো পর্যন্ত উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। তাই ৭০ বছরের পুরনো কেপিএমের উৎপাদনের ধারা সচল রাখতে চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। একই সাথে কর্ণফুলী রেয়ন কমপ্লেক্সে (কেআরসি) নতুন পেপার মিল স্থাপনেরও পরিকল্পনা কথা জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ড. এম এম কাদের।
কেপিএম সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫১ সালে রাঙামাটি কাপ্তাই উপজেলা চন্দ্রঘোনা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এশিয়ার বৃহত্তম কাগজের কল কর্ণফুলী পেপার মিলস। ১৯৫৩ সালে ১৬ অক্টোবরে এর প্রথম বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। কাগজ উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রপিক্যাল হার্ড উড, বাঁশ, আখের ছোবড়া, পুরাতন কাগজ, পুরাতন কারোগেটেড কার্টুন, আমদানিকৃত পাল্প।
এসবের মধ্যে প্রধান কাঁচামাল বাঁশের প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে কর্ণফুলী পেপার মিলটি চন্দ্রঘোনায় স্থাপন করা হয়। বাঁশের উপর নির্ভশীলতা কমানোর জন্য এর পাশাপাশি বনবিভাগের বনায়নকৃত পাল্পউড ব্যবহৃত হতো। কর্ণফুলী পেপার মিলের দু’টি মেশিনে সাদা কাগজ আর একটিতে বাদামী ও অন্যান্য রঙিন কাগজ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এছাড়া সার্টিফিকেট, ডুপ্লিকেটিং, সিমপ্লেক্স, এজুর লেইড ও টাইপ, রাইটিং ম্যানিফোল্ড জাতীয় কাগজ, করোগেটেড বোর্ড, করোগেটেড কার্টুন, বিটুমিন পেপার, গাম টেপ এবং ওয়াক্স কোটেড পেপারও এখানে উৎপাদিত হতো। কিন্তু ক্রমাগত লোকসান আর দেনার কারণে সংকটে পড়ে কেপিএম। দীর্ঘ দিন ধরে অচল রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চলছে যন্ত্রপাতি সংস্কারের কাজ। বেতন ভাতা না পেয়ে চাকরি ছেড়েছেন অনেক শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকতা। কিন্তু তারপরও অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে মিলটি চালু রেখেছে সংশ্লিষ্টরা।
রাঙামাটি কর্ণফুলী পেপার মিলস জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম খাঁন জানান, পুরনো যন্ত্রপাতি সংস্কারের কারণে বর্তমানে কেপিএমে উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রয়েছে। কারখানার উৎপাদন সচল রাখার স্বার্থে সোডা রিকোভারি বয়লার ও এসটিজি-৪ (স্ট্রিম টারবাইন জেনারেটর) এর ওভারহলিং বা রিনোভেশের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হলে আবারও মিলের উৎপাদন স্বাভাবিক হবে।
অন্যদিকে কর্ণফুলী পেপার মিলসের পাশে বন্ধ হয়ে যাওয়া কর্ণফুলী রেয়ন কমপ্লেক্সে আরো একটি নতুন কাগজ মিল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বিসিআইসির। নতুন এ মিল করার জন্য কেপিএম’র সহায়ক হবে বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি কর্ণফুলী পেপার মিলস ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ড. এম এম কাদের জানান, রাঙামাটি কর্ণফুলী পেপার মিলস ৭০ বছরের পুরনো হলেও মিল বন্ধ করে দেওয়ার মতো এখনো সময় হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি নানা জঠিলতার কারণে লোকসানে পড়তে হয়েছিল। তবে কেপিএমের মাননোয়নে বিকল্প প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সাময়িক সময়ের জন্য মিলটি বন্ধ থাকলেও সংস্কারের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে খুব দ্রুত মিল চালু করা সম্ভব হবে। তবে সরকারিভাবে নতুন একটি পেপার মিল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। কেপিএমকে চালু রেখে নতুন মিল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মিলটি চালু হলে কেপিএমের লোকজন কর্মস্থানের সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশে সরকারি চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ কাগজ কর্ণফুলী পেপার মিল সরবরাহ করে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানটি বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ কাগজ উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। তাই কেপিএমের ধারা অব্যাহত রাখতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিডি প্রতিদিন/৮ এপ্রিল, ২০১৮/ফারজানা