বগুড়ার ধুনটে স্ত্রীকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বানাতে ৭ম শ্রেণীর পড়ুয়া ছেলেকে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি করেছে এক স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা। এবিষয়ে সেই বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য সরোয়ার হোসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের পাঁচথুপি নিয়ামতিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য তফশিল ঘোষনা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ি ২৫ মার্চ মনোনয়নপত্র ক্রয় এবং জমাদানের দিন ধার্য করা হয়। সেই দিন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক কামরুল হাসান আনসারী তার স্ত্রী আমেনা বেগমের মনোনয়নপত্র উত্তোলন করে জমা দেন।
পরবর্তীতে ২৮ মার্চ অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের দিনে আমেনা বেগম, নাসরিন নাহার, এসএম বারিকুল ইসলাম ও হোসেন আলীকে অভিভাবক সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কামরুল হাসান আনসারীর স্ত্রী আমেনা বেগম অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
সেই বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য সরোয়ার হোসেন জানান, আমেনা বেগম তার ছেলে আসিফ হাসান আনসারীকে ধুনট ভরনশাহী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণি পাশের সনদ ও ছাড়পত্র দেখিয়ে গত ৩০ জানুয়ারী পাঁচথুপি নিয়ামতিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করায়। তবে আসিফ হাসান আনসারী প্রকৃতপক্ষে ধুনট এনইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর নিয়মিত ছাত্র। তার রোল নং-১৮২, শাখা-গ।
সে ২০১৬ সালে ধুনট সদর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়ে ধুনট এনইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তারপরও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কামরুল হাসান আনাসারী তার স্ত্রীকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করতে তার ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলেকে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি করে অবৈধভাবে বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমুন নাহার জানান, কামরুল হাসান আনসারী তার স্ত্রীকে সভাপতি বানানোর জন্য তার ছেলে আসিফ হাসান আনসারীর সনদ জালিয়াতি করে আমার স্কুলের ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি করে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং লিখিতভাবে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ধুনট ভরনশাহী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, কামরুল হাসান আনসারী তার ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে আসিফ হাসান আনসারীর তথ্য গোপন করে ২০১৭ সালে মার্চ মাসে ৪র্থ শ্রেণীতে ভর্তি করায়। কিন্তু এরপর থেকেই সে কোন দিন বিদ্যালয়ে আসেনি। পরবর্তীতে সে ৪র্থ শ্রেণির ছাড়পত্র নিয়েছে। তবে তার জালিয়াতির বিষয়টি আমি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সে ভুয়া সদস্য হিসেবে গণ্য হবে এবং ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর