বৈসাবির রঙে রঙিন পাহাড় মেতেছে উৎসবে। পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু অর্থাৎ বৈসাবিকে ঘিরে উৎসবের জোয়ারে ভাসছে রাঙামাটি। বছর ঘুড়ে বৈসাবি আসলেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা গানের সুর আর নাচের তালে তালে মেতে উঠে।
পাহাড়ি পল্লীগুলোকে মুখরিত রাখে- 'তুরু তুরু তুরু রু বাজি বাজেত্তে, পাড়ায় পাড়ায় বেরেবঙ বেক্কুন মিলিনে, এচ্চ্যা বিঝু, বিঝু, বিঝু' এর অর্থ হচ্ছে-তুরু তুরু তুরু রু বাঁশি বাজছে, পাড়ায় পাড়ায় বেড়াব সবাই মিলে, আজ বিঝু বিঝু বিঝু...এটা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বৈসাবি উৎসবের গান। চারদিকে এখন এ গানের গুনজন। বাতাসে ভাসছে পাহাড়ি তরুনীদের নুপুরের ছন্দ। এ উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে পার্বত্যাঞ্চলে। প্রায় প্রতিদিন বসে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে জমজমাট আসর। এবার উৎসবে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি ছাড়া যোগ দিয়েছে দুর দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকরাও। ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে স¤প্রীতির মিলনে পাহাড়ের বইছে এখন আনন্দের বন্যা। উৎসবমুখর হয়ে ওঠেছে পাহাড়ি জনপদও।
সোমবার সকালে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু অর্থাৎ বৈসাবির চারদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, এমপি।
এসময় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহবায়ক প্রকৃত রঞ্জন চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম লেখক ফোরাম ও জাকের সভাপতি শিশির চাকমা, রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা, চাকমা সার্কেল রাজ পুত্র ত্রিভূবন আর্যদেব ও বৈসাবি উৎসব উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ইন্টু মনি চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
পরে রাঙামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে বনার্ঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের-চাকমা, মারমা, খুমী, ম্রো ও চাক, বম, খিয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা, অহমিয়া, পাংখোয়া ও ত্রিপুরা নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুনী তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। এসময় তাদের পোশাকে ফুটে উঠে তাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ের পরিচয়। এসময় শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষির্ণ করে রাঙামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু অর্থাৎ বৈসাবি উপলক্ষে চারদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- ফুল বিজু, মুল বিজু, গোজ্জ্যাপোজ্জ্যা অর্থাৎ বাংলা নবর্বষ ও সাংগ্রাই আর্থাৎ জলোৎসব। মুলত আগামী ১২এপ্রিল অথাৎ চৈত্র মাসের ২৯ তারিখ আকাশে সূর্য্য উঠার সাথে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে দেবি গঙ্গাকে ফুল উৎসর্গ করে শুরু করা হবে দিনব্যাপী ফুল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা। তার পর দিন আর্থাৎ মুল বিজু শুরু হবে ১৩ এপ্রিল। এদিন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মধ্যে চাকমারা-বিজু, ত্রিপুরা- বৈসুক , তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা-বিহু হিসেবে দিনব্যাপী উৎসবটি পালন করবে। এছাড়া ১৪ এপ্রিল সারা দেশের সাথে মিল রেখে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাঙামাটিতেও উদযাপিত হবে বাংলা নবর্বষ। এরপর ১৯ এপ্রিল সকাল শুরু হবে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই আর্থাৎ জলোৎসব। পুরোনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মারমা তরুন-তরুনীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে পানি ছিটিয়ে নেচে গেয়ে পার করবে দিন। এরমধ্যে চলবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-সংগীত, জুম খেলাধুলা, শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, পণ্য প্রদর্শনী, বেইন বোনা প্রতিযোগিতা ও নাট্যোৎসব।
বিডিপ্রতিদিন/ ই-জাহান