পলো দিয়ে এক সঙ্গে শত শত মানুষের মাছ শিকার আবহমান বাংলার এক অনন্য ঐতিহ্যবাহী উৎসব। নির্মল এই বিনোদনের জন্য গ্রামের মানুষ অপেক্ষায় থাকেন এক বছর। প্রতি বছরের মতো এবারো পলো উৎসব শুরু হয়েছে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের পাঙ্গিয়ার বিলে।
রবিবার (০৮ এপ্রিল) শুরু হওয়া এই মাছ ধরা উৎসবে মঙ্গলবার পযন্ত আনন্দে মেতে উঠেছেন প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন পলো দিয়ে মাছ শিকার করতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সারাদিন হাজার হাজার মানুষ পলো, চাকপলো, নেটপলো, ঠেলা জাল, লাঠি জালসহ মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম দিয়ে মাছ শিকার করেছেন। বিলপাড়ে সমবেত হয়ে এ উৎসব উপভোগ করেছে স্থানীয় জনগণ। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরতে পেরে সবাই মহা খুশি। বিগত কয়েকদিন ধরে মাইকিং করে সবাইকে মাছ ধরার পলো উৎসবের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, শোল, রুই, বোয়াল, কাতলাসহ নানা প্রজাতির মাছ পলোতে আটকা পড়েছে। উৎসবে অংশ নেওয়া অনেকেই রুই-কাতলা ধরতে পেরে আনন্দে আত্মহারা। আবার কেউ কেউ মাছ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন। পাশের গুরুদাসপুর উপজেলার চাচকৈড় বাজার থেকে আসা আবুল কাশেম বলেন, লোকমুখে পলো উৎসবের কথা শুনে সাত-সকালেই পলো নিয়ে এসেছি। একটি বড় কাতলা মাছ ধরতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
নাটোর শহরের আলাইপুর থেকে আবু কাসেম ও আব্দুর রহমান রহমান এসেছেন। তারা বলেন, শখের বশে পলো বাইতে এসে রুই, কাতলা আর বোয়াল মাছ পাইছি।
ওই গ্রামের নুরল ইসলাম জানান, এটি আমাদের পুরনো ঐতিহ্য। প্রতিবছর উৎসবের মাধ্যমে পলো দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। এর মধ্যে আলাদা আনন্দ রয়েছে। এবারের উৎসবে অংশ নেওয়া অনেকেই কোনো না কোনো মাছ পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এলাকার প্রবীণরা জানান, এই ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। নির্বিচারে মা, ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ নিধন করায় মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। দিনদিন খালবিল, নদীনালা, ডোবা-পুকুর ভরাট হচ্ছে। ফসল ও বাড়ি রক্ষার নামে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। জমির পোকা-মাকড় নিধনের নামে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিষাক্ত পানিতে মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে।
নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিলুফার ইয়াসমিন ডালু বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও কেউ কেউ বাঙালির গ্রামীণ এই ঐতিহ্যকে লালন করার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর নগর ইউনিয়নের পাঙ্গিয়ার বিলে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব হয়। আগামীতেও এই উৎসবের আয়োজন করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/১০ এপ্রিল ২০১৮/হিমেল