রাঙামাটির নানিয়ারচ উপজেলায় ই ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (গণতান্ত্রিকের) শীর্ষ নেতাসহ দুর্বৃত্তের ব্রাশফায়ারে ৫ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (গণতান্ত্রিকের) শীর্ষ নেতা তপন জ্যোতি চাকমা (৫২), পার্বত্য এমএন লারমা লারমা গ্রুপ অর্থাৎ (সংস্কারপন্থী) যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য তনয় চাকমা (৩১), মহালছড়ি যুব সমিতির সভাপতি সুজন চাকমা (৩০), সেতু লাল চাকমা, (৩৬) ও মাইক্রোবাসের ড্রাইভার মো. সজিব (৩৫)। এসময় আহত হয়েছে আরও ৮জন।
শুক্রবার দুপরের দিকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা বেতছড়ির ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।
তবে রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির বলছেন বর্তমানে পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে। এলাকায় আইন শৃঙাখলাবাহিনীর টহল জোড়দার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটির নানিয়ারচ উপজেলার সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়া শেষ করে ফেরার পথে বেতছড়ি এলাকায় আগে থেকে ওঁৎ পেতা থাকা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের গাড়ি বহরে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে। এসময় ঘটনাস্থলে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর বিদ্রোহী গ্উপ নব্য মুকোশবাহিনীর প্রধান ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (গণতান্ত্রিকের) আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ সংগঠনটির ১৩ জন নেতাকর্মী গুলি বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলে নিহত হয় ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের শীর্ষ নেতা তপন জ্যোতি চাকমা (৫২), তনয় চাকমা (৩১), মহালছড়ি যুব সমিতির সভাপতি সুজন চাকমা (৩০), সেতু লাল চাকমা, (৩৬) ও মাইক্রোবাসের ড্রাইভার মো. সজিব (৩৫)। এসময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয় আরও ৮জন।
এ ব্যাপারে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত জীবন্ত চাকমা ও নীরও কুমার চাকমা নিজেকে সাধারণ গ্রামবাসী দাবী করে বলেন, তারা সবাই যাচ্ছিল সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। কিন্ত তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি খাগড়াছড়ি সীমানা অতিক্রম করে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বেতছড়ি পৌছামাত্র সন্ত্রাসীরা এলোপাথারী গুলি চালায়। সন্ত্রাসীরা প্রথমে চালককে গুলি করলে মাইক্রোবাসটি উল্টে যায়। পরে সন্ত্রাসীরা এলোপাথারী গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে তাদের সাথে থাকা ৫জন মারা যায়। নিহতদের মধ্যে ২জনের মরদেহ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ও ৩ জনকে রাঙামাটির সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্থানীয় তাদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।
নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, খবর পেয়ে হতাহতদের উদ্ধারে তাৎক্ষণিক পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল গেছে। রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ৩ জনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে সেতু লাল চাকমা নামে ১ জন ও গাড়ির চালক মো. সজীব মারা যান।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. নয়নময় ত্রিপুরা জানান, হাসপাতালে গুলি বৃদ্ধ ১০জনকে আনা হলেছিল তাদের মধ্যে ২জন মারা যায়। আশংকাজনক হওয়ায় আহতদের মধ্যে ৪জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। বাকি চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির এমএন লারমা গ্রুপ অর্থাৎ সংস্কারপন্থীর কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুদর্শন চাকমা এ ঘটনার জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) অর্থাৎ প্রসীত বিকাশ খীসা গ্রুপকে দায়ী করেছে। তবে হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের প্রচার ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান নিরণ চাকমা।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত মামালা হয়নি বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন