চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য একাধিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সংস্থাই সেই পরিকল্পনা অনুসরণ করেনি। নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণ করা হয় না। অভাব খেলার মাঠের। উদ্যান বাণিজ্যিকীকরণ, শব্দদূষণ, দক্ষ নগর পরিকল্পনাবিদের অভাব। ফলে বাড়ছে জলাবদ্ধতা, যানজট এবং শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি। সামগ্রিকভাবে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়ায় এর খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এমন চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে নগরের একটি হোটেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজিত ‘চট্টগ্রাম মহানগরের অপরিকল্পিত নগরায়ণ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শফিক হায়দারের সভাপতিত্বে এবং বেলার প্রোগ্রাম ও ফিল্ড কোঅর্ডিনেটর এএমএম মামুনের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থপতি জেরিনা হোসেন। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসার্চ ল্যাবের সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া, ফোরাম ফর প্ল্যানড চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী স্বপন কুমার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকিয়া মুমতাহিনা, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাবরিনা সুলতানা, চুয়েটের সিভিল ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আসিফুল হক ও নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রাশেদুল হাসান। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেলার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মনিরা পারভীন।
মূল প্রবন্ধে স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামের জন্য ১৯৬১, ১৯৬৫-১৯৮৬, ১৯৯৫-২০১৫, ২০০৮ সালে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সংস্থা সেই পরিকল্পনা অনুসরণ করেনি। ফলে শহরটি এখন ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হতে চলেছে। চসিক-সিডিএ উভয় সংস্থারই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও পেশাদার দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। সিডিএর একটি ছোট পরিকল্পনা বিভাগ থাকলেও চসিকের তাও নেই। ফলে তাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পরিকল্পনাহীনভাবেই বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রাশেদুল হাসান বলেন, ‘সিডিএ নগরের সল্টগোলায় মার্কেট করেছে। সেখানে কোনো বেচা-বিক্রি নেই। দোকান বরাদ্দ হয় না। অনর্থক একটি মার্কেট করেছে। যা উন্নয়ন করা হয়েছে সব প্ল্যান বর্হিভূত। ওয়াসা কর্ণফুলীর ওপারে পানির লাইন নিয়েছে। কিন্তু কোনো গ্রাহক খুঁজে পাচ্ছে না। শহরে কোনো ভবনের নকশা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনন্যা আবাসিকে একটি হাসপাতাল ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান বা ভবনই হয়নি। সেখানে ভবন করতে হলে ১৩৩ ফুট মাটির নিচে যেতে হয়। কল্পলোক আবাসিকে সব ভবন বিল্ডিং কোড ভঙ্গ করেছে। কর্ণফুলী আজ দূষিত এক জলাধার। বিপ্লব উদ্যান ধ্বংস। নগরবাসীর হাঁটার কোনো জায়গা নেই, কোনো পার্ক নেই। ইট-পাথর দেখে দেখে মানুষের মনে কোনো মানসিক শান্তি নেই। শহরে বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে। শব্দ দূষণে শিশুরা দিশেহারা। খেলার মাঠ নেই। হাসপাতালে যেতে যানজটে পড়তে হয়। বসবাসের অযোগ্য এক নগরে পরিণত হয়েছে।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ