মাল বোঝাই ট্রাকসহ ঠাকুরগাঁওয়ের বেইলি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার ৫ মাসেও সংস্কার বা নতুন ব্রিজ নির্মাণে এখনো কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক কৃষক উৎপাদিত পণ্য সরবরাহে নিয়মিত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে মালামাল নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এ অবস্থায় ভাড়ি যানবাহন চলাচলে উপযোগি একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের সাথে সদর উপজেলার আকচা, সালান্দর, বড়গাঁও, রাজাগাঁ ইউনিয়নের কয়েক লক্ষ মানুষের নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যম ছিল টাংগন নদীর উপর বেইলি ব্রিজটি। কিন্তু গেত ৫ মাস আগে হঠাৎ মাল বোঝাই ট্রাক পারাপারের সময় ব্রিজটি ভেঙে পড়ে যায়। এরপর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলজিইডির উদ্যোগে ১ মাসের মাথায় কোন মতে জনসাধারন চলাচলের উপযোগী করে ভেঙ্গে যাওয়া ব্রিজটির পাশে একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করা হলেও ভাড়ি মালামাল নিয়ে নিয়মিত জেলা শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারগুলোতে উৎপাদিত পন্য নিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে চার ইউনিয়নের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। এ কারণে মালামাল নিয়ে ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে তাদের।
অন্যদিকে যানবাবাহনে পণ্যের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে অকেন সময় লোকসানও গুনতে হচ্ছে। এছাড়া অভিাভাবকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত পাঠদানেও যেতে অনিহা প্রকাশ করছেন। সব মিলিয়ে ব্রিজটি সংস্কার কিংবা নতুন ব্রিজ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য মতে ওই চারটি ইউনিয়নে ২ লাখ কৃষক প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে নিয়মিত সবজি, ধান, গম ও ফল উৎপাদন করে আসছে। ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক।
স্থানীয় এলাকাবাসি আব্দুল আলিম, ফজলুল হক, জয়নাল, মুন চৌধুরীসহ অনেকে জানান, শহরের সাথে যোগাযোগে নির্ভরশীল ব্রিজ ছিল বেইলি ব্রিজটি। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ব্রিজটির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ না নেয়ায় আমরা ক্ষুদ্ধ। সাধারণ মানুষের মৌলিক চহিদার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছেলে মেয়েদের নিয়ে প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া, পণ্য সরবরাহ আনা নেয়াসহ সবকিছুর প্রয়োজনে চরম ভোগান্তির রুপ নিয়েছে। আমরা আশা করবো দ্রুত ব্রিজ নির্মাণে পদক্ষেপ নিবেন সরকার।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার আকচা ও রাজাগাঁ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন ও মোশারুল ইসলাম জানান, সত্যিকার অর্থে আমরা জনপ্রতিনিধি হয়ে নিরুপায়। ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় ২ মাসের মধ্যে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ব্রিজটি সংস্কার অথবা নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে বলে আশস্ত করলেও কয়েক দফায় কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিলেও তা কাজে আসেনি। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে কৃষকরা।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কান্তেশ্বর বর্মন জানান, একটু দেরি হলেও টেকশই একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় ভেঙে যাওয়া ব্রিজটি সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কৃষক ও সাধারণে মানুষের সাময়িক কষ্ট হলে নতুন একটি টেকশই ব্রিজ নির্মাণ করা হলে সব কষ্ট দূর হবে। বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে সেখানে নতুন একটি সিমেন্টের ব্রিজ নির্মাণে ইতোমধ্যে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুত ব্রিজ নির্মাণে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
১৯৮৫-৮৬ সালে এলজিইডি আওতায় ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে টাংগন নদীর উপর নির্মান করা হয় এই বেইলি ব্রিজটি।
বিডি প্রতিদিন/৫ মে ২০১৮/হিমেল