পুলিশের টানা ৭দিন অভিযানের পর উন্মোচন হল বগুড়ার শিবগঞ্জের ধানক্ষেতে হওয়া চার হত্যাকান্ডের ঘটনার রহস্য। গ্রেফতারকৃত তিনজন পুলিশকে জানিয়েছে, মাদক বিক্রির ৬ হাজার টাকা নিয়ে বিরোধেই নৃশংসভাবে খুনে হয়েছে শিবগঞ্জের সেই চার যুবক।
গ্রেফতারকৃত খুনীদের টার্গেট ছিল দুই জন। দুই জনকে জবাই করার ঘটনা অপর দুইজন দেখে ফেলায় তাদেরকেও একই কায়দায় হত্যা করে খুনিরা। এই নৃশংস হত্যাকান্ডে মোট ৯ জন অংশগ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার করার পর বাকীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
বগুড়া পুলিশ সদস্য ও ঢাকার ইন্টেলিজেন্স ইউং যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে এই হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করে। সোমবার দুপুরে বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুইয়া বিপিএম তার কার্যালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এই কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, ৭ মে চারজন হত্যাকান্ডের সংবাদ পাওয়ার পর থেকে পুলিশ সদস্যরা কাজ শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনার এক পর্যায়ে গত রবিবার ও সোমবার ভোর রাত পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে শিবগঞ্জ উপজেলার কাঠগড়া চকপাড়ার রফিকুল শেখের পুত্র জুয়েল শেখ (২৫), একই উপজেলার চন্দনপুর তালুকদারপাড়ার আব্দুস সামাদের পুত্র আবুল কালাম আজাদ (৪৮) ও ডাবইর গ্রামের মৃত আবু বক্করের পুত্র মো: রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে দিয়েই চাঞ্চল্যকর এই ফোর মার্ডারের রহস্য উন্মোচন হয়।
গ্রেফতারকৃদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পুলিশ সুপার জানান, মাদক বিক্রির প্রায় ৬ হাজার টাকা নিয়ে হত্যাকান্ডের দুই তিনদিন আগে খুনিদের সাথে নিহতদের মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় খুনিরা আটমুল ইউনিয়নের কাঠগড়া চকপাড়ার আছির উদ্দিনের পুত্র শাবরুল ইসলাম শাবুল (৩৫) ও একই এলাকার জহুরুল ইসলামের পুত্র জাকারিয়া (৩২) কে হত্যার পরিকল্পনা করে।
সেই অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত রুবেলের বাড়িতে মাদক সেবনের কথা ও পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার প্রলোভন দিয়ে ঐ দুইজনকে নিয়ে আসা হয়। পরে তাদেরকে ডাবইর ধান ক্ষেতের মধ্যে কৌশলে নিয়ে গিয়ে হাত বেঁধে ধারালো ছোরা দিয়ে জবাই করে হত্যা করে খুনিরা। শাবুল ও জাকারিয়াকে হত্যার পরই ঐ ক্ষেতের পাশ দিয়ে কালাই উপজেলার পুনট (পাঁচপাইকা) গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে মোহাম্মদ হেলাল (৩২) ও নান্দাইল দীঘি গ্রামের শামছুদ্দিন মন্ডল শ্যাম্পুর ছেলে খবির হোসেন ওরফে বাউশা (৩৪) কে দেখতে পেয়ে ডাক দেয় খুনিরা।
এই দুইজন খুনিদের জানায় যে, তারা কিছু হেরোইন নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। কথা বলার সময় দুইজনের জবাইকৃত লাশও দেখে ফেলে তারা। দেখে ফেলার কারণে একই কায়দার হেলাল ও খবিরকে তারা হত্যা করে। বাউশা ও হেলালকে খুনিরা চিনত না বা তাদের পরিকল্পনার মধ্যেও তারা ছিল না। শুধু দুইজনের হত্যকান্ড জেনে ফেলায় তাদের হত্যা করে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায় গ্রেফতারকৃতরা।
গ্রেফতারকৃতরা সবাই মাদকের সাথে জড়িত। হত্যাকান্ডে দুইজন চার ব্যক্তিকে ছোরা দিয়ে জবাই করেছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে বাকি ছয়জনের নাম পুলিশ এখনই বলছে না।
বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম মহোদয়ের সার্বিক তত্বাবধানে হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন হলো। এদিকে সোমবার দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপারসহ পুলিশ কর্মকর্তারা। এরপর তাদের আদালতে রিমান্ডের আবেদন করবে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সকল অপরাধিদের গ্রেফতার করা যাবে। গত ৮ মে চার হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত শাবলুর পিতা আছির উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ মে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ডাবইর গ্রামের ধান ক্ষেতের মধ্য থেকে ৪ যুবক শাবুল, জাকারিয়া, হেলাল ও বাউশার হাত পিছন দিক দিয়ে মোড়া করে বাঁধা থাকা গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ।
বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর