চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) আগামী ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিজয় দিবস সামরিক কুচকাওয়াজে নতুন প্রজন্মের একটি মাঝারি ওজনের ট্যাঙ্ক উন্মোচন করতে যাচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ ড্রোন-প্রধান যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতাকে সামনে রেখে এই ট্যাঙ্কটি নকশা করা হয়েছে।
সম্প্রতি বেইজিংয়ের রাস্তায় মহড়ার সময় ট্যাঙ্কটির ঝলক ধরা পড়েছে। এটি পিএলএ'র বর্তমান প্রধান যুদ্ধট্যাঙ্ক টাইপ-৯৯এ’র তুলনায় হালকা এবং উন্নত জিএল৬ অ্যাকটিভ প্রোটেকশন সিস্টেম ও ৩৬০-ডিগ্রি হুমকি শনাক্তকারী রাডার সজ্জিত।
বিশ্লেষক ফু কিয়ানশাওর মতে, এই সিস্টেম শত্রুপক্ষের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করতে সক্ষম।
ইউক্রেন যুদ্ধে ড্রোন হামলায় বিপুল সংখ্যক রুশ ট্যাঙ্ক ধ্বংস হওয়ার অভিজ্ঞতা চীনকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারি সাঁজোয়া যান এখন আগের তুলনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এগুলো শত্রু ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের সহজ লক্ষ্যবস্তু।
নতুন চীনা ট্যাঙ্কে ১০৫ মিমি কামান ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে টাইপ-৯৯এ-তে রয়েছে ১২৫ মিমি কামান। ধারণা করা হচ্ছে, এর ওজন মাত্র ৩৫–৪০ টন, যা যুক্তরাষ্ট্রের এম১এ২ অ্যাব্রামস (৭০ টন) বা জার্মান লেপার্ড-২ (৫৫–৭০ টন)-এর তুলনায় অনেক হালকা।
ফু কিয়ানশাও জানান, হালকা নকশার কারণে এই ট্যাঙ্ক পাহাড়ি এলাকা, দ্বীপ ও সমুদ্রসৈকতে অবতরণ অভিযানের মতো বিভিন্ন ভূপ্রকৃতিতে সহজে ব্যবহারযোগ্য হবে। পাশাপাশি এটি পরিবহন বিমানে বা অবতরণ জাহাজে তুলনামূলকভাবে দ্রুত মোতায়েন করা সম্ভব।
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যৎ যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাঙ্কের ভূমিকা কেবল শক্তিশালী কামান বা পুরু বর্মে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এগুলো হবে তথ্য-নির্ভর যুদ্ধের অংশ—যেখানে ট্যাঙ্ক নিজেই একটি তথ্য-সংযোগ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে, সঙ্গে থাকবে ড্রোন নজরদারি ও বুদ্ধিমত্তা সহায়তা।
বিশ্লেষকদের মতে, পিএলএর এই নতুন ট্যাঙ্ক হয়তো ধীরে ধীরে টাইপ-৯৬ ও টাইপ-৯৯ সিরিজের উৎপাদন বন্ধের পথও তৈরি করবে।
ফু কিয়ানশাও বলেন, নতুন প্রজন্মের চীনা ট্যাঙ্ক প্রমাণ করছে যে ভবিষ্যৎ স্থলযুদ্ধে টিকে থাকার ক্ষমতা, তথ্যভিত্তিক নেটওয়ার্ক ও বহুমুখিতা হবে মূল চাহিদা।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল