পঞ্চগড়ের বেশ কয়েকটি সড়ক দখল করে চলছে রমরমা বালুর ব্যবসা। রাস্তা বন্ধ করে বালির স্তুপের সামনে ট্রাক দাঁড় করিয়ে চলছে লোডিং-আনলোডিং। সড়কের অধিকাংশ জায়গায় বালুর স্তুপ আর সারাদিন বালুর ট্রাকের দখলে থাকায় সাধারণ পথচারীরের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনাও। একই সাথে ১০ চাকার ভারি ট্রাক চলাচল করায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই সংযোগ সড়কগুলো।
সরেজমিন দেখা গেছে, পঞ্চগড়ের চিনিকল থেকে দেবীগঞ্জ সড়কের একাধিক স্থানে বালুমহাল থেকে বালি উত্তোলন করে ট্রাক্টরে করে এনে ফেলা হচ্ছে সড়কের উপর। ওই সড়কের গড়েরডাঙ্গা এলাকায় দেখা যায় সড়কের উপর দিনে দুপুরেই শত শত ট্রাক দাঁড় করিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। ট্রাকের পাশ দিয়ে একটি ভ্যান পাশ কাটিয়ে যাওয়াটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা দেখা যায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার ব্যারিস্টার বাজার ভজনপুর সড়ক, তালমা থেকে কাটাবাড়ি সড়ক, সিএন্ডবি মোড় থেকে মীরগড় নাওঘাট সড়কেও। সংযোগ এই সড়কগুলোতে ভারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ৩০ থেকে ৪০ টন বালু নিয়ে দিব্যি চলাচল করছে দশ চাকার ট্রাক। প্রতিদিন শত শত ট্রাক হাজার হাজার টন বালি নিয়ে চলাচল করায় সড়কগুলোর ইট-বিটুমিন উঠে গেছে। কোথাও কোথাও দেবে গিয়ে চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বালির ট্রাক চলাচল করায় প্রতিনিয়ত উড়ছে ধুলাবালি। পিচ ঢালা পাকা রাস্তা হলেও বালি জমার কারণে এখন রাস্তাগুলো কাঁচা রাস্তার মতোই হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কে চলাচলে ভীষণ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটছে । সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলায় বালুমহাল রয়েছে মোট ১৫টি। এর বেশিরভাগই করতোয়া নদীতে অবস্থিত। করতোয়া-চাওয়াই সংযোগ বালুমহাল, চাওয়াই বালুমহাল, করতোয়ার মীরগড় বালুমহাল, করতোয়ার ফুলতলা বালুমহাল, করতোয়ার দেবীগঞ্জ বালুমহালসহ সবগুলো বালুমহাল থেকেই ইজারাদারেরা বালু উত্তোলন করে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে করে তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু ইজারাদারেরা নিজস্ব জায়গায় বালু লোড আনলোড করার পরিবর্তে রাস্তার দু'পাশে বালু লোড আনলোড করছেন।
মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনছুর আলী খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রাস্তার মধ্যে বালু ফেলে তা ট্রাকে তোলায় আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসনকে বার বার অভিযোগ করার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
পঞ্চগড় পাথর বালি যৌথ ফেডারেশনের সভাপতি ও বালুমহালের ইজারাদার হাসিবুল হক প্রধান জানান, আমরা সড়কের উপর পাথর ও বালি রাখতে এবং সড়কের উপর ট্রাক দাঁড় করিয়ে বালু লোড না করার জন্য মাইকিং করেছি। ইজারাদারদের নির্দেশনাও দেয়া আছে। কিন্তু তারপরও তারা তা মানছে না।
পঞ্চগড় সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ শামস মোকাদ্দেস বলেন, সড়কের উপর বালি ফেলতে এবং সড়কে ট্রাক দাঁড় করিয়ে বালি তুলতে ব্যবসায়ীদের বার বার নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা তা মানছে না। সড়ক নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে শীঘ্র আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা