বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৩৫ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৬৪ কোটি মার্কিন ডলার এবং রপ্তানি আয় ছিল প্রায় ৭১ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটির সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২১৮০ কোটি ডলার। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল ঢাকায় চীনা দূতাবাসে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসইভাবে এগিয়ে নিতে এবং এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ। দুই দেশের মধ্যে অবকাঠামো, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, শিক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে বহুমাত্রিক সহযোগিতা বিদ্যমান।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অটোমোবাইল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাদুকা, লজিস্টিকস, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও স্বাস্থ্যসেবা, এপিআই, সেমিকন্ডাক্টর এবং জাহাজ নির্মাণ প্রভৃতি সম্ভাবনাময় খাতে চীনের বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। তাসকীন আহমেদ জোর দিয়ে বলেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চীনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, গত এক বছরে ২০টিরও বেশি নতুন চীনা প্রতিষ্ঠান তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে প্রায় ৮০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চীনা উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিশেষত ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। তবে বিদ্যমান উচ্চ শুল্ক ও নীতিগত সহায়তার অভাব এ খাতে বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ সরকার দ্রুত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক খাতনির্ভর, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। তাই তিনি রপ্তানির বহুমুখীকরণ এবং সম্ভাবনাময় নতুন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা ও শিল্পের প্রতিযোগিতা বাড়াতে চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
আমদানি ব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হলেও চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং শিল্প বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা সীমিত হয়ে আসবে। তাই চীনের সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়ানো, প্রযুক্তি স্থানান্তর, উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং বহুমুখী খাতে রপ্তানি বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়োপযোগী। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৭৩৫ কোটি ডলারে উন্নীত হওয়া দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের গভীরতা প্রমাণ করে।