বাড়ি নির্মাণ মানেই শুধু অর্থ খরচ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সময়, শ্রম এবং অনেক স্বপ্নও। অথচ সেই স্বপ্নের বাড়ির দেয়ালে যদি নোনা ধরে সৌন্দর্য নষ্ট করে, তখন বিষয়টি কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। আমাদের দেশের আবহাওয়া, নির্মাণসামগ্রীর গুণগত মান এবং কাজের প্রক্রিয়ার ত্রুটি মিলিয়েই দেয়ালে নোনা ধরার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ দুটোই সম্ভব।
ঝিরঝিরে বৃষ্টি যখন মনকে শান্ত করে, তখন অনেকের মনেই উদ্বেগ জাগে বাড়ির স্যাঁতসেঁতে দেয়াল আর ছোপ ছোপ দাগ নিয়ে। বর্ষার শেষে এ সমস্যা যেন আরও প্রকট হয়ে ওঠে। দেয়ালের আর্দ্রতা শুধু সৌন্দর্য নষ্ট করে না, বরং নীরবে বাড়ির কাঠামোকে ক্ষয় করতে থাকে এবং পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অনেকেই পানিরোধী বা ওয়াটারপ্রুফিংকে একটি বাড়তি বিলাসিতা মনে করেন, কিন্তু এটি যে আসলে বাড়ির জন্য একটি অপরিহার্য বর্ম, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না।
দেয়ালে ড্যাম্প কেন হয়
দেয়াল ড্যাম্প হওয়ার অনেক রকম কারণই থাকতে পারে। এসবের মধ্যে রয়েছে- কম পোড়ানো বা নিম্নমানের ইট ব্যবহার, ইট তৈরির মাটিতে অতিরিক্ত লবণের উপস্থিতি, নির্মাণসামগ্রী-বালি, সিমেন্ট, পানি-এসবের মধ্যে লবণের পরিমাণ বেশি থাকা, পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, দেয়ালের অভ্যন্তরীণ পানির লাইনে ফাটল বা ছিদ্র থাকা, প্লাস্টার শুকানোর আগেই রং করা, গাঠনিক ত্রুটি বা নকশাগত সমস্যা, আলো-বাতাস চলাচলের অভাব থাকলে, মেঝে ও দেয়ালের মাঝে সিক্ততা রোধক স্তর না থাকা ইত্যাদি। এর মধ্যে বলতে হবে- একটি বাড়ির সবচেয়ে বড় শত্রু হলো পানি। এটি অদৃশ্য ফাটল দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে বাড়ির বুনিয়াদকে দুর্বল করে দেয়। সিমেন্ট, কংক্রিট এবং লোহার রড-এ তিনটি উপাদান একটি বাড়ির মেরুদণ্ড। নিয়মিত পানির সংস্পর্শে এলে কংক্রিটে ফাটল ধরে এবং লোহার রডে মরচে পড়ে। এতে দেয়ালের প্লাস্টার খসে যায়, পেইন্ট উঠে আসে এবং বিশ্রী স্যাঁতসেঁতে দাগ পড়ে।
এ ক্ষয় মূলত তিনটি প্রধান কারণে গুরুতর
কাঠামোর ক্ষতি : জলীয় বাষ্পের কারণে কংক্রিট ও ইটের বুনিয়াদি দুর্বলতা দেখা দেয়। এটি কাঠামোর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের মেরামতের খরচ বাড়িয়ে তোলে।
সৌন্দর্য নষ্ট : ভেজা দাগ, ফাটা প্লাস্টার এবং মলিন দেয়াল আপনার বাড়ির সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়। এটি শুধু মানসিক শান্তি নষ্ট করে না, বরং বাড়ির বাজার মূল্যও কমিয়ে দেয়।
স্বাস্থ্যঝুঁকি : স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছত্রাক ও কালো ছাঁচের জন্ম হয়। এ ছাঁচ থেকে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, ত্বকের সমস্যা এমনকি ফুসফুসের সংক্রমণও হতে পারে, যা বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ।
সমাধান : ভিতরে লিকেজের সমস্যা থাকলে দেয়াল মেরামতের একমাত্র উপায় হচ্ছে দেয়ালের প্লাস্টার ভেঙে ফেলা। এর বাইরে বাজারে এমন টেকনোলজি রয়েছে যেটা ড্যাম্পের সাশ্রয়ী এবং কার্যকর সমাধান দিতে সক্ষম। এবং সেটা পেইন্টের মাধ্যমেই সম্ভব। এ আধুনিক পদ্ধতির মূল সুবিধাগুলো হলো : এ ধরনের পণ্যগুলো দেয়ালের ওপর সরাসরি ব্রাশ দিয়ে প্রয়োগ করা যায়। এর জন্য কোনো বিশেষ রাজমিস্ত্রির প্রয়োজন হয় না, একজন সাধারণ পেইন্টারই এ কাজটি করতে পারেন। বার্জারের ওয়াটারপ্রুফিং ড্যাম্পগার্ড এটার ভালো সলিউশন হতে পারে।
কার্যকর প্রযুক্তি : এ পণ্যগুলোতে ওয়েট অ্যাডহেশান বাইন্ডার টেকনোলজি (Wet Adhesion Binder Technology) ব্যবহার করা হয়। এটি এমন এক ধরনের আধুনিক কেমিক্যাল প্রযুক্তি, যা বিশেষ করে রং, কোটিংস ও নির্মাণসামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়। এর মূল কাজ হলো-কোনো পৃষ্ঠ ভিজে গেলেও (যেমন : আর্দ্রতা, বৃষ্টি, বা ড্যাম্পের কারণে) রং বা কোটিং যাতে সহজে খসে না পড়ে এবং পৃষ্ঠের সঙ্গে শক্তভাবে লেগে থাকে। সাধারণ রং বা কোটিং শুকনা দেয়ালে ভালোভাবে লেগে যায়, কিন্তু দেয়াল ভিজে গেলে আস্তে আস্তে খসে পড়ে। ওয়েট অ্যাডহেশান বাইন্ডার এমন বিশেষ পলিমার বা রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি, যা আর্দ্র অবস্থাতেও দেয়ালের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকে।