মোবাইল কল ও ইন্টারনেটের দাম কমাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের ছেঁটে ফেলতে যাচ্ছে সরকার। টেলিকমিউনিকেশন্স নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং পলিসির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। আগের লাইসেন্সিং কাঠামো ভেঙে নতুন কাঠামো করা হয়েছে। মোবাইল ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমভিএনও), ভিও-ওয়াইফাই, ওয়াইফাই ৬, ওয়াইফাই ৭, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), এআই ইত্যাদি আধুনিকতম প্রযুক্তিগত সেবার সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। নিত্যনতুন ডিজিটাল সার্ভিসের প্রতিবন্ধকতা দূর করে নতুনদের বিশেষত এসএমইদের জন্য উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব উদ্যোগের কারণে একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ হবে। বদলে যাবে টেলিকম সেক্টর।
নতুন নীতিমালার স্বল্পমেয়াদি ফলে বলা হযেছে- ফোর-জি সম্প্রসারণ ও ফাইভ-জি প্রস্তুতির জন্য ৫০-৬০ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ হবে। বড় আকারে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিশ্চিত করবে। ভ্যাট ও ট্যাক্স আয়ের হার উন্নত হবে। ডোমেস্টিক ও আন্তর্জাতিক সেবার খরচ কমবে। ফাইবার দৈর্ঘ্য বর্তমানের ১ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার হবে। টাওয়ার সংখ্যা ৪৮ হাজার থেকে হবে ১ লাখ। ৫০ ভাগের বেশি শেয়ার করা হবে। (বর্তমানে মাত্র ২০ ভাগ শেয়ার করা হয়)। মধ্যমেয়াদিতে বলা হয়েছে- সরকারি রাজস্ব মোবাইল খাতে ২০২৪ সালে ১৩ বিলিয়ন টাকা থেকে ২০২৯ সালে প্রায় ২২-২৫ বিলিয়ন টাকায়, ফিক্সড সার্ভিস খাতে ৮-১০ বিলিয়ন টাকা থেকে বেড়ে ২০২৯ সালে হবে ৫৫-৬০ বিলিয়ন, অবকাঠামো লাইসেন্স খাতে প্রায় ১৫-২০ বিলিয়ন টাকা ও আন্তর্জাতিক লাইসেন্স খাতে প্রায় ৫-৬ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছাবে। দীর্ঘমেয়াদে বলা হয়েছে- নতুন নতুন অপারেটর আইপিওর জন্য প্রস্তুত হবে। মূলধন বাজারে তারল্য বাড়বে। ব্রডব্যান্ড ও আইপিটিডি ক্লাউডের সমন্বিত সেবা সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যাবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন নেটওয়ার্ক টপোলজি ও লাইসেন্সিং রেজিমের মূল লক্ষ্য হলো টেলিকম খাতকে প্রযুক্তি-নিরপেক্ষ, সরল ও প্রতিযোগিতামূলক কাঠামোয় রূপান্তর করা। সেবা লাইসেন্সধারীরা ফাইবার, ওয়্যারলেস, স্যাটেলাইট বা ক্লাউড/এজ কম্পিউটিং- যে কোনো উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ভাবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন। বর্তমান লাইসেন্সিং কাঠামো টু বা থ্রি-জি যুগের বাস্তবতা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছিল। এ কাঠামোয় সেবা সীমিত, প্রতিযোগিতা কম এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ধীরগতির। বিশ্বব্যাপী ফাইভ-জি, আইওটি, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ক্লাউড কম্পিউটিং ও ব্লকচেইনের মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। যা নতুন ধরনের সেবা তৈরি করছে। নেটওয়ার্ক পরিচালনায় আনছে জটিলতা। এসব প্রযুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন ও বাণিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে নমনীয়, প্রযুক্তিবান্ধব নীতিমালা প্রয়োজন, যা বর্তমান কাঠামোয় অনুপস্থিত। প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আগের লাইসেন্স রেজিমে ২৬ ধরনের মোট ৩ হাজার ২৯৯টি লাইসেন্স থাকায় টেলিকম সেবার মানোন্নয়ন ও গুণগত মান অনুযায়ী দামের সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। নতুন নীতিমালায় লাইসেন্স কাঠামোকে মাত্র তিন প্রকারে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। আগের বহুমাত্রিক লাইসেন্স পদ্ধতির কারণে টেলিকম মার্কেট থেকে মধ্যস্বত্বভোগীরা উল্লেখযোগ্য ভ্যালু অ্যাড না করেই রাজস্বের অংশে ভাগ বসাত, যা এ পলিসি দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছে। এতে রাজস্ব বাড়বে। জলবায়ুজনিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাভারেজ সম্প্রসারণ, সাশ্রয়ী মূল্যে সেবাসহ নাগরিকবান্ধব কাজে ব্যয় করা যাবে। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে কয়েক ডজন মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাংলাদেশে মাত্র চারটি। এখানে যাতে আরও কোম্পানি আসতে পারে নতুন নীতিমালায় তা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রাইভেট ফাইভ-জি, ভয়েস ওভার ওয়াইফাই, ওয়াইফাই-৬, ওয়াইফাই-৭ এর মতো সেবাগুলো দেওয়া যাবে। আগের চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হবে। কম টাকায় সেবা পাবেন গ্রাহকরা।