গত দু'সপ্তাহের টানা বর্ষণে নাটোর শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাসা-বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম। পাঠদান ব্যাহত হওয়ার কারণে জলবদ্ধতা দূরীকরণে সোমবার সকালে নাটোর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়র জলাবদ্ধতা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ তুলে নেন।
প্রতিবছর বৃষ্টি আসলেই ভোগান্তিতে পড়ে নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় এর শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকবৃন্দ। আর এই ভোগান্তির নাম হল জলাবদ্ধতা। অপরিকল্পিতভাবে নিচু জায়গায় বিদ্যালয় এর ভবন নির্মাণ করায় প্রতি বছরই বর্ষাকালে জলমগ্ন থাকে বিদ্যালয় এবং এর আশেপাশের এলাকা। এবারে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এবার রাস্তা প্রশস্তকরণ ডিভাইডার নির্মাণ এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের কারণে পানি নিষ্কাশনের সমস্তপথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে এই জলাবদ্ধতার। বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও এর কোন কূল-কিনারা করতে পাচ্ছে না। পৌরসভা থেকে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য বারবার শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচ দিলেও এর কোন স্থায়ী স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।
পৌরবাসীর অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার আবেদন করার পরেও মুক্তি মেলেনি তাদের। এদিকে, পৌর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে জলাবদ্ধতার জন্য একে অপরকে দুষছে। পানিতে তলিয়ে আছে স্কুলের বারান্দা, হাঁটু সমান পানি পেরিয়ে ক্লাসে আসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নাটোর শহরের বড়গাছা, কানাইখালী ও পটুয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বাসা-বাড়ি ও সরকারি বালক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পৌরবাসীর অভিযোগ, প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পাওয়ার পরও নাটোর পৌরসভায় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এজন্য, পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতেই দায়ী করছেন তারা।
নাটোর সরকারি বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, বেশিরভাগ সময়েই স্কুলগুলো হাঁটু পানির নিচে অবস্থান করছে।
পৌর মেয়রের অভিযোগ, পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় না করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তা সংস্কার করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দাবি, পৌরসভার ড্রেনগুলো অপরিকল্পিত হওয়ায় পানির ধারণ ক্ষমতা কম।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ যে কাজ করছে তা সমন্বয়হীন হওয়ায় নাটোরবাসী আজ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সড়ক ও জনপথ বিবাহের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং বলেন, সে জায়গায় ড্রেন বসানোর যোগ্য নয়। তাই অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পৌরসভা থেকে যে অভিযোগ দেয়া হচ্ছে তা সঠিক নয়।
১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত নাটোর পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয় ১৯৯৩ সালে। প্রায় দু'লাখ মানুষের এই পৌর এলাকায় প্রায় ৮৮ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে। যার মধ্যে ১৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার পাকা ও কাঁচা ৬৮ দশমিক চার শূন্য কিলোমিটার ।
বিডি-প্রতিদিন/৩০ জুলাই, ২০১৮/মাহবুব