কক্সবাজারের পেকুয়ায় জলদাস সম্প্রদায়ের সাত জেলের বিরুদ্ধে মাছ চুরির অপবাদ দিয়ে তাদের মাথা ন্যাড়া করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তাদের হাতে মাছ তুলে দিয়ে ন্যাড়া মাথায় বিভিন্ন স্থানে ঘুরানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় সর্বত্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
গত ২৪ আগস্ট বিকেলে উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের বদিউদ্দিন পাড়ায় এ ঘটনা ঘটলেও বিলম্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হওয়ার পর সোমবার বিকাল থেকে ওই ঘটনা জানাজানি হয়।
নির্যাতিত জেলেরা হলেন, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের জলদাস পাড়ার যতীন্দ্র জলদাসের পুত্র লেদু মিয়া সর্দার, একই এলাকার মন্নাথ সর্দারের পুত্র গোপাল সর্দার, তার পুত্র লিটন সর্দার, দিলীপ সর্দারের পুত্র ঝুমুর সর্দার, বাবুল সর্দারের পুত্র লিটন সর্দার, মৃত বহদ্দারের পুত্র অরুণ সর্দার ও বোয়ালখালী উপজেলার গৌরনন্দী এলাকার হাসি জলদাসের পুত্র দুলাল জলদাস।
এদিকে চট্টগ্রামের পটিয়ার সাত জেলেকে মাছ ধরতে কক্সবাজারের পেকুয়ায় এনে চুরির অভিযোগ তুলে মাথা ন্যাড়া করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনার চারদিন পর নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে পেকুয়া থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পটিয়ার জেলে গোপাল সরদার বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় নুরুল আবছার ওরফে বদুসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত ২৫ জনসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সোমবার রাতে মামলাটি দায়ের হয়। এই মামলার এজাহার নামীয় ৫ জনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এরা হলেন, পেকুয়ার রাজাখালীর বামুলা পাড়ার মৃত বজল আহমদের ছেলে জামাল হোসেন (৩২), চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার পুটিবিলা ইউনিয়নের তাঁতি পাড়ার মৃত আবদুল করিমের ছেলে আবুল কাশেম ও বাশঁখালীর জলদি ইউনিয়নের মহাজন পাড়ার নেপাল কৃষ্ণ শীল (৪০)।
বাদী গোপাল সরদার বলেন, গত ২৪ আগস্ট মাছ ধরার কথা বলে আমিসহ ১২ জেলেকে রাজাখালীতে আনেন নুরুল আবছার প্রকাশ বদু মেম্বার। মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে বদু মেম্বারের নির্দেশে আমিসহ ৭ জেলেকে আটকে রেখে নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে এলাকায় ঘুরানো হয়। এসময় আমাদের জিম্মি করে ধর্মবিরোধী বক্তব্যও আদায় করে তারা।
পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহিরুল ইসলাম খান তিনজনকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এজাহার নামীয় অপর দুইজনকে এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে অজ্ঞাত আসামিদের সনাক্তপূর্বক গ্রেফতার করতে থানা পুুলিশের একাধিক টিম অভিযানে রয়েছে।
চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মতিউল ইসলাম বলেন, সাত জেলেকে নির্যাতন করায় লিপ্ত থাকা কেউই পার পাবেনা। সবাইকে গ্রেফতার করতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/২৮ আগষ্ট ২০১৮/হিমেল