চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরে গণপিটুনিতে মো. রিহান উদ্দিন মাহিন (১৪) নামের এক কিশোর নিহতের ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের মাতম নেমে এসেছে। নিহতের পরিবার দাবি করেছে, ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
মাহিনের মা খাদিজা বেগম শুক্রবার রাতেই ফটিকছড়ি থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৬-৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এজাহারভুক্ত দুই আসামি—মুহাম্মদ নোমান (২২) ও মুহাম্মদ আজাদ (২৩)—কে গ্রেফতার করেছে। তারা উভয়ই মধ্যম কাঞ্চননগরের বাসিন্দা। অপর তিন আসামি নাজিম উদ্দিন, মোহাম্মদ তৈয়ব ও মহিউদ্দিন পলাতক রয়েছেন। এদের মধ্যে নাজিম মামলার এক নম্বর আসামি।
ফটিকছড়ি থানার ওসি নুর আহমদ জানান, পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তিনি বলেন, “আমরা ঘটনার দু’ধরনের কারণ পাচ্ছি। বাদিপক্ষ বলছে—সামাজিক বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আর গ্রেফতারকৃত আসামিরা জানিয়েছে—চোর সন্দেহে তিন কিশোরকে পেটানো হয়েছিল। তদন্তে প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে।”
নিহত মাহিন কাঞ্চননগর উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও মুদি দোকানি লোকমানের ছেলে। স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে মাহিন ও তার দুই বন্ধু মানিক ও রাহাত চট্টগ্রাম শহর থেকে ফিরছিল। রাত ৩টার দিকে গ্রামে পৌঁছালে ৭-৮ জন তাদের চোর সন্দেহে ধাওয়া করে। কিশোররা দৌড়ে একটি নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নিলে সেখান থেকে ধরে এনে সেতুর ওপর বেঁধে নির্মমভাবে পেটানো হয়। ঘটনাস্থলেই মাহিন মারা যায়।
মানিক ও রাহাত গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
মাহিনের বাবা লোকমান ছেলের স্কুল ড্রেস বুকে চেপে ধরে বিলাপ করতে করতে বলেন, “আমার চোখের সামনে খুনিরা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমাকেও জখম করেছে। আমি এর বিচার চাই।”
মাহিনের মা খাদিজা বেগম বলেন, “আমার ছেলে পানি চেয়েছিল, কিন্তু খুনিরা আমাকে পানি দিতেও দেয়নি। উল্টো অপমান করেছে। আমার ছেলেকে তারা নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে।”
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, “কিশোর হতাহতের ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। দুই আসামি গ্রেফতার আছে, বাকিদের ধরতে কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।”
বিডি প্রতিদিন/হিমেল