ঘুর্নিঝড় ফণীর হানা সত্বেও রমজান ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে মুড়ির গ্রাম হিসেবে পরিচিত নাটোরের গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুর গ্রামে। এবার ফনীর প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টির পানিতে ধান ভিজে যাওয়ায় মুড়ি তৈরি কাজ ব্যহত হয়। ঘুর্নিঝড় ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টির পানিতে ধান ভিজে ফুলে যায়। ধান শুকানোর জন্য অধিকাংশ বাড়িতে ২/৩ দিন ধরে মুড়ি তৈরি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে প্রভাব পড়ছে মুড়ি উৎপাদনেও। নাটোরের মুড়ি রাসায়নিকমুক্ত হওয়ায় সারা দেশেই প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
নাটোর সদর উপজেলার গোয়ালদিঘী, কৃষ্ণপুর, বাকশোর, নেপালদিঘী, তেগাছি, তালগাছি, ঢাকোপাড়াসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের আড়াই শতাধিক পরিবারের নারী পুরুষ রাসায়নিকমুক্ত মুড়ি তৈরি করে। রোজা শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাতে ভাজা মুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে এসব গ্রামের মানুষেরা।
এবার ঘূর্ণিঝড়জনিত বৃষ্টিপাতে ভাটা পড়েছে রমজান মাসে ইফতারের প্রধান উপকরণ মুড়ি তৈরির কাজ। এখানকার মুড়ি ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। এই মুড়ি গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামকে ঘিরে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ধারে ডালসড়ক এলাকায় গড়ে ওঠেছে মুড়ির আড়ৎ। এই আড়ৎ থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াইশ মণ মুড়ি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। কিন্তু এবার ফণী'র প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টির পানিতে ধান ভিজে যাওয়ায় ২/৩ দিন মুড়ি তৈরি কার্যক্রম ব্যহত হয়। এছাড়া আমদানিকৃত মুড়ির দামও কম। এতে করে এবার লোকসানের আশংকা করছেন মুড়ি প্রস্তুতকারিরা।
এসব গ্রামের মুড়ি তৈরীর সাথে জড়িত কারিগররা জানান, আমন, বিনা-৭, হরি, ২৯, ১৬, ৫২ প্রভৃতি ধানের মুড়ি তৈরী করলেও গত দুই দিনের (৩ ও ৪ মে) আদ্র আবহাওয়ায় মুড়ি তৈরির ধান ভিজে যাওয়ায় মুড়ি তৈরি করতে পারেনি কোন কোন পরিবার। রাসায়নিকমুক্ত হওয়ায় ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্বেও জেলার একমাত্র মুড়ির মোকাম নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ডালসড়ক বায়তুন নূর মসজিদ হাটে সরবরাহ কমেছে মুড়ির।
সরজমিনে এসব গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কেউ উঠানে ধান শুকাচ্ছেন, কেউ মাঝে মাঝে ধান নেড়ে দিচ্ছেন, আবার কেউ ব্যস্ত চুলোয় চাল গরম করতে। এভাবেই চলছে মুড়ি তৈরি। রমজানকে ঘিরে এই ব্যস্ততা বেশী। অধিকাংশ বাড়ির উঠানে শুকাতে দেওয়া হয়েছে মুড়ি তৈরির ধান। তবে বছরের এ সময়টিতে বাড়িতে বাড়িতে ঝনঝন-শনশন মুড়ি ভাজার শব্দ শোনা যায়। মুড়ি প্রস্তুতকারী নারীরা দম ফেলার সময় না পেলেও এবার কাটাচ্ছেন অলস সময়। মুড়ি বাজারজাতকরণে জড়িয়ে এখানকার পুরুষদেরও একই অবস্থা। দুদিনের বৃষ্টিতে ধান শুকাতে না পারায় রোববার সকালে রোদ উঠতে দেখে উঠানে শুকাতে দিয়েছেন ধান। রোদে ধান শুকাতে পারলে রাত থেকেই পুরোদমে শুরু হবে মুড়ি ভাজা।
উল্লেখ্য, রোজা শুরুর দুইদিন আগে আড়তগুলোতে হাতে তৈরি আমন ধানের মুড়ি মণপ্রতি ২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকায় এবং ইরি ধানের মুড়ি ২০০০ থেকে ২৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বাজারগুলোতে ইরি ধানের মুড়ি কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও আমন ধানের মুড়ি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর