২৩ আগস্ট, ২০১৯ ১৯:১৬

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া হাসপাতালে অর্ধেক ডাক্তার নেই!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া হাসপাতালে অর্ধেক ডাক্তার নেই!

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে বগুড়া-নওগাঁ সড়কের পার্শ্বে অবস্থিত দুপচাঁচিয়া সরকারি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি অন্তহীন সম্যসায় জর্জরিত। চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারের অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য থাকায় রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

জানা যায়, বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক সংলগ্ন দুপচাঁচিয়া সিও অফিস বাসস্টেশনের পাশে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি এই হাসপাতালটি অবস্থিত। হাসপাতালটি বিগত কয়েক বছরে অবকাঠামোগত বেশ কিছু উন্নয়ন হয়েছে। তবে ২০০৮ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না পাওয়ায় হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

বর্তমানে হাসপাতালে ডাক্তারদের ২৭ টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ১১ জন। দীর্ঘদিন যাবত ডাক্তারদের ১৬ টি পদ শূন্য রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবারে হাসপাতালে বিভিন্ন রোগীর অপারেশনের তারিখ নির্ধারণ থাকলেও অজ্ঞানের ডাক্তারের পদ শূন্য থাকায় পাশ্ববর্তী কাহালু হাসপাতাল থেকে অজ্ঞান ডাক্তার নিয়ে এসে অপারেশন করা হচ্ছে।
অপারেশনে এ ক্ষেত্রে চরম বিরম্বনায় পড়তে হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ইসিজি মেশিন বরাদ্দ হলেও টেকনিশিয়ানের পদ শূন্য। হাসপাতাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য ৫ জন সুইপারের স্থলে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১ জন। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি ১ জন সুইপারের পক্ষে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা দুঃসাধ্য। ফলে হাসপাতালটিতে প্রায় সময় নোংড়া পরিবেশ বিরাজ করছে। ড্রেন গুলোতে পঁচা পানি জমে মশার কারখানায় পরিণত হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালের চারপাশে আগাছা ও মশা, মাছির অভায়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। 

হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তারদের হাসপাতাল ক্যাম্পাসে আবাসিক বাসভবন থাকলেও ডাক্তাররা জেলা শহরেই অবস্থান করছেন। রুটিন মোতাবেক প্রতিদিন দু’এক জন ডাক্তার হাসপাতালে যাওয়া আসা করছেন। ডাক্তাররা নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে নয় টা থেকে দুপুর আড়াই টা পর্যন্ত হাসপাতলে অবস্থান করে আবার জেলা শহরে ফিরে যাচ্ছে। 

আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য থাকলেও ডা. দেলোয়ার হোসেন সাঈদী নামে একজন ডাক্তার আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়মানুসারে আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে ২৪ ঘণ্টায় কর্মস্থলে থাকার কথা। তিনিও জেলা শহরেই বসবাস করছেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেক চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক সময় চিকিৎসক সহকারী দ্বারা চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হচ্ছে। 

চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। সবার জন্য বিশেষ করে দরিদ্র অসহায় মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা নিতে আসা ভোগান্তির শিকার রোগীরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
 
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কুদ্দুস এর সাথে যোগাযোগ করলে জানান, তিনি প্রায় ১ বছর পূর্বে হাসপাতালে যোগদানের পর ডাক্তারের শূন্য পদগুলো পূরণসহ উল্লেখিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য একাধিক বার বগুড়া জেলা সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন। কিন্তু তার কোনো সমাধান হয়নি। ব্যক্তিগত উদ্যেগে প্রায় ১২ বছর যাবৎ বিকল এক্স-রে মেশিন ও বৈদ্যুৎতিক জেনারেটর সচল করেছেন। দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকা অপারেশন থিয়েটারটি চালু করে প্রতি মঙ্গলবার বিভিন্ন রোগীর অপারেশন করছেন। হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারদের ছেলে মেয়েরা জেলা শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করায় তারা জেলা শহরে বসবাস করছেন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার কোন বিঘ্ন ঘটছে না। এ ছাড়াও গ্রাম পর্যায়ে সরকারি বাসভবন গুলোর ভাড়া বেশি হওয়ায় অনেক ডাক্তার সরকারি হাসপাতালের বাসভবন গুলোতে থাকতে চান না।     


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর