আমার জীবটাই হচ্ছে যন্ত্রাময়। এতটা ব্যাথা নিয়ে বাস করা আমার জন্য কঠিন। এদিকে ডান পায়ে সমস্যা, ঠিকমত হাটতে পারি না। খুড়িয়ে-খুড়িয়ে হাটতে হয়। অন্যদিকে আমার ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানির সঙ্গে অনেক ভোগান্তি তো রয়েছেই। এরপর হাটতে গেলে শরীরটা অনেক ভারী ভারী লাগে। যে কেউ আমাকে দেখে দূরে সরতে চেষ্টা করে। রাস্তায় হাটতে পারি না। আমার সঙ্গে কেউ কথা বলতে চায় না। ছোট বাচ্চারা যখন আমাকে দেখে, তারা শুধু ভুত বা দৈত্য বলে দৌড় দিয়ে পালায়।
বিরল রোগে আক্রান্ত মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকার লামচরী গ্রামের দুই সন্তানের জনক দিনমজুর মো. মিলন হাওলাদার (৪০) হৃদয়ে চরম কষ্ট নিয়ে এ কথাগুলো বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমি কাজ ছাড়া খুব বেশি একটা বাইরে বের হই না। শিশুসহ অনেকে দেখলে আমাকে ভয় পায়। এক সময় আমার এ অবস্থা ছিল না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগ বেড়ে গেছে। আজকাল আমার ছেলেও আমার সাথে ঠিক মত কথা বলে না। আমি জানি, কেন সে এমন করে, তবে আমি আমার ছেলে মেয়ে বা পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারছি না। আমি খুব খারাপ বোধ করি, রাতে চিন্তায় ঘুমাতে পারি না।
মিলন হাওলাদারের বয়স যখন ১০ বছর তখন তার মাথায় একটি ছোট গুটি দেখা যায়। গত ৩০ বছরে আস্তে-আস্তে শরীরের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে গুটিগুলো। মুখ বিকৃত হওয়ায় ঠিক মত খেতে পারেন না স্বাভাবিকভাবে। এ কারণে এখন ঠিকমত চোখে দেখতে প্রচণ্ড সমস্যা হচ্ছে। চলাচলে অনেক কষ্ট হয় তার। আগে বিভিন্ন রকমের কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন, এখন সেটাও পারেন না। বিভিন্ন সময় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করালেও অর্থভাবে উন্নত চিকিৎসার অভাবে সুস্থ হননি। প্রতিবন্ধী হলেও তার কপালে জোটেনি একখানা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। এ নিয়ে তিনি অনেকবার ধরণা দিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে।
স্ত্রী নুরজাহান, ছেলে গোলাম রাব্বানী ও এক মেয়ে সাদিয়াকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন চলে তার। ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ রোগটি থেকে মুক্তি পেতে চান দিনমজুর প্রতিবন্ধী মিলন হাওলাদার।
মিলন হাওলাদারের স্ত্রী নূরজাহান বলেন, আমার স্বামীর মাথা থেকে শুরু হওয়া এ রোগের বিস্তার দিন দিন ভয়ংকর হওয়ার পর্যায়গুলো আমি কাছ থেকে দেখেছি। কিন্তু অভাবের কারণে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছি। বিভিন্ন কবিরাজী ওষুধ খাওয়াইছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এমনকি আমার স্বামীর কপালে আজ পর্যন্ত একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডও জোটেনি। আমরা কিভাবে এখন পরিবার নিয়ে বাঁচবো।
এ বিরল রোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কালকিনি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (আরএম) মো. রেজাউল করিম বলেন, ওই রোগী চিকিৎসার জন্য যদি আমাদের হাসপাতালে আসে তাহলে পরীক্ষা করে বলতে পারবো আসলে তার কি রোগ। আমি তার বিষয়ে পুরোপুরি না দেখে বলতে পারবো না।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম