১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৩:৫৯

বিনা দোষে ৫৮ দিন ধরে জেলে সুজিত বর্মন

আলপনা বেগম

বিনা দোষে ৫৮ দিন ধরে জেলে সুজিত বর্মন

সুজিত বর্মন

থানায় গিয়ে ধরা দিয়ে আটক হন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া গ্রামের মনোরঞ্জন বর্মনের ছেলে সুজিত বর্মন (২৫)। জামালপুর কর্মস্থল থেকে বাড়িতে গিয়ে প্রতিবেশির চক্রান্তে বিনা দোষে জেল খাটতে হচ্ছে তাকে। আটকের নয়দিন পর প্রথম সন্তানের বাবা হলেও দেখা হয়নি সন্তানের মুখ। ৫৮ দিন ধরে জেল খাটছেন। 

জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই শিরিশ বিশ্বশর্মার মেয়ে আশুজিয়া জিএনসি স্কুলে বি সেকশনের নবম শ্রেণির ছাত্রী দিপ্তী রানী সূত্রধর পালিয়ে যায় গৌরীপুর এলাকার হান্নান নামের এক রাজমিস্ত্রীর সাথে। ১৮ জুলাই তার বাবা বাদী হয়ে কেন্দুয়া থানায় একই গ্রামের তিন ভাইবোনকে আসামি করে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। অপহরণ মামলায় দিপ্তীর সহপাঠি মনি বর্মনের ভাই সুজিত বর্মন, প্রদীপ বর্মন ও মনিকে আসামি করা হয়। পুলিশ ওই দিনই সুজিতকে থানায় ডেকে নিয়ে আটক করে। অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়। 

এরপর পুলিশ টানা অভিযান চালিয়ে ঢাকার গাজীপুর থেকে এক মাস পাঁচদিন পর ২২ আগস্ট ধর্মান্তরিত হওয়া দিপ্তীকে উদ্ধার করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানতে পারে সে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নাম রাখে সানজিদা আক্তার রুনা। অত্যন্ত সুকৌশলে পালিয়ে যাওয়ার সাত দিন আগে থেকে বাবার মোবাইল ফোনে অযথা নিজ ধর্মের স্থানীয় সহপাঠিদের ফোন দিয়ে ম্যাসেজ দিয়ে রাখে। যাতে করে কারো সন্দেহ না হয়। পরবর্তীতে সে পালিয়ে যায়।

এদিকে বাবার সন্দেহ এবং স্থানীয়দের সন্দেহ সহপাঠি মনির ভাইসহ বিভিন্ন জনকে। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন নারী সংগঠনসহ সাংবাদিক সুশীল সমাজের মাধ্যমে পুলিশের ওপর চাপ। পুলিশ খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে দিপ্তীকে কোর্টে সোপর্দ করলে সে জবানবন্দীও দেয় কিভাবে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে দিপ্তী রানী বের হয়ে বাবা ও পরিবারের সাথে ঢাকায় অবস্থান করলেও বিনা দোষে আটক সুজিতের এখনো ছাড়া মেলেনি। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক কল্যানি হাসান বলেন, পুলিশ সহ আমরা সকলেই অপহরণ শোনার পর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। কিন্তু অপহরণের সাথে কোন মিলই নেই দিপ্তীর পালিয়ে যাওয়ার। এরপরও দিপ্তীর বাবার আক্রোশে বিনা দোষে ৫৮ দিন ধরে জেল খাটছে ছেলেটি। 

সুজিতের দু বছর হয় বিয়ে হয়েছে রীপা রানী দাসের সাথে। আটকের নয়দিন পর সন্তান জন্ম দিলেও সেই সন্তানের মুখ দেখাতে পারেন নি স্বামীকে। মা অতসি রানী বলেন, আমার ঘরের চাকরিজীবী উপার্জনক্ষম ছেলে সুজিত। বাকী দুই ছেলে মেয়ে পড়ছে। আমার ঘরে খাবার নেই। আমার ছেলে দোষী থাকলে জেল খাটলে আপত্তি ছিলো না। থানার পুলিশ খবর দিতেই আমি তিনজনকেই থানায় পাঠিয়েছিলাম। 
এ ঘটনায় এলাকাবসীর মাঝেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সকলেই সুজিতের মুক্তি দাবী করে সংশ্লিষ্টদের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত প্রার্থনা করেন। 

এ ব্যাপারে কেন্দুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দিপ্তীর সাথে হান্নানের দু বছর ধরে প্রেম। তার বাবার ফোন নিয়ে কথা বলতো হান্নাসহ বিভিন্ন জনের সাথে। সেই সাথে তার বাবাকে বলতো রং নাম্বার। তার বাবা যাতে ছেলের পরিচয় না পায় সে জন্যেই এমন বুদ্ধি করে মেয়েটি কথা বলতো। এরপর গৌরীপুর উপজেলার সিংরাউন্দ গ্রামের আঃ হাইয়ের ছেলে হান্নানের সাথে পালিয়ে যেতে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই ফাঁদ পাতে। সে পালিয়ে যাওয়ার আগে ঘনিষ্ট বন্ধুদের সন্দেহমূলক মেসেস দেয় বাবার ফোন থেকেই। পরে স্কুলে না গিয়ে পালিয়ে যায়। 

এদিকে মামলার পর থেকে বাদীসহ বিভিন্ন জন আসামিদের ধরার জন্য নানা চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এর মাঝে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এক কিশোরীর লাশের খবরে মেয়ের বাবা সহ আমরা সবাই বিচলিত। পরে ডিএনএ টেস্ট সহ নানা কিছু করিয়ে জানতে পারলাম এটি সেই মেয়ে নয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৩৫ দিন পর দিপ্তীকে সুকৌশলে গাজিপুর থেকে উদ্ধার করি। এরপর সকল রহস্যের উন্মোচন হয়। মেয়েটি ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দীও দিয়েছে কিভাবে পালিয়ে গেছে। এই ঘটনায় যাদেরকে আসামি করেছে তাদের কোন দোষ নেই। কিন্তু তারপরও সুজিতকে না ছাড়ার জন্য মেয়েটির বাবা পায়তারা করছে এখনো। 
আমরা সকল সাক্ষ্যগ্রহণ এবং তদন্ত প্রায় শেষ করে ফেলেছি। মামলার কাজও প্রায় শেষের দিকে। মূল আসামি এতে সংযুক্ত হবে। আর নির্দোষ অবশ্যই ছাড়া পাবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন ওসি। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর