কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে ফের ধস দেখা দিয়েছে। মাত্র তিন মাস আগে সংস্কার করা ৩০ মিটার অংশ ফের পদ্মায় ধসে পড়েছে।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে একবারে হঠাৎ করেই বাঁধ ধসে পানিতে চলে যায়। এতে বাঁধের ওপর কয়েকটি বাড়ির বাসিন্দারা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের কালোয়া গ্রামে এ অংশটি পড়েছে। বাঁধে ধস দেখা দেয়ার পর দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ড সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অনিয়মের ফলেই বারবার এমন ঘটনা ঘটছে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী সংলগ্ন এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্পের ৩ হাজার ৭২০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করে সরকার।
সরজেমিন দেখা গেছে, ২০১৮ সালে বাঁধ নির্মাণের পরে কয়া ইউনিয়নের কালোয়া বাজার থেকে একটু দূরে পদ্মার নদীর একটি অংশে একযোগে নদীতে চলে যায়। তিন মাস আগে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করেন স্থানীয় একজন ঠিকাদার। প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ মিটার ভাঙন কবলিত অংশ মেরামত করা হয়। তবে সংস্কারের পর তিন মাস টিকলো না মেরামত করা অংশ। সকালে ভাঙনের পর ধসে পড়া অংশে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করার চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন দেখতে এলাকার মানুষ ভিড় করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদেক বলেন,‘ সকাল ৯টার আগে এখানে পাক শুরু হয়, আর বুদবুদ উঠতে শুরু করে। পরে একযোগে পুরো অংশ নদীতে বসে যায়। গত বছরও একইভাবে বাঁধ ধসে পড়ে। সংস্কারের পর সবাই ভেবেছিল আর ধসে পড়বে না। তাবে অনিয়ম আর যথাযথভাবে কাজ না হওয়াকে দায়ী করেন এলাকার মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, এ বছর পদ্মায় পানি বাড়ার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন পানির লেবেল বাড়ছে। এতে করে সব বাঁধ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের যে অংশ ধসে পড়েছে তা সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছিল। গত বছরও এ অংশটি নদীতে চলে যায়। ভাঙন শুরুর পরপরই ৯ হাজার ব্লকসহ জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাঙন বন্ধ হয়ে গেছে। পানি কমলে বাঁধটির এ অংশ পুনরায় মেরামত করা হবে।
অনিয়মের বিষয়ে বলেন, এসব কাজে অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ দল এসব কাজ বুঝে নেয়। পানির চাপ বাড়লে অন্য স্থানেও ক্ষতি হতে পারে। তাই সব প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।
এদিকে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানান, পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বুধবার পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় পানি প্রবাহের মাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার, যার বিপদসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার ও গড়াই নদীর গড়াই রেল ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহের মাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার, যার বিপদসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। যেভাবে পানি বাড়ছে তা চলমান থাকলে চরম ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র।
জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন,‘ বিষয়টি শোনার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। নতুন করে আর কোনো স্পট যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন