দেশের বৃহৎ পৌরসভা বগুড়া। ৬ লাখ মানুষের বসবাস পৌর এলাকায়। ২১ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া পৌরসভায় কোন উন্নয়নের ছোঁয়া নেই, নেই সংস্কারের উদ্যোগ। দিনে দিনে সংস্কার না করার কারণে পৌর এলাকার সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে অন্যতম সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশা।
সংস্কার না হওয়ায় বগুড়া পৌরসভার রাস্তাগুলো এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠছে। কার্পেটিং রাস্তার পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই সেখানে পানি জমে থাকে। এতে করে প্রতিদিনই দুর্ভোগের শিকার পৌরবাসী।
জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে উত্তরের প্রাণকেন্দ্র বগুড়া। প্রতিনিয়ত মানুষ বাড়লেও সেবা বাড়েনি পৌরসভার। দিন দিন যেন নাগরিক সুবিধা কমছে পৌরবাসীর। প্রায় দেড়শ' বছরের প্রাচীন এই পৌরসভার আয়তন ২০০৪ সালে ১৪ বর্গ কিলোমিটার থেকে বৃদ্ধি করে প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটারের উন্নিত করা হয়।
পৌরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা ১২ থেকে বেড়ে ২১ এ দাঁড়ায়। পৌরসভার আয়তন বাড়ানোর পর ৫ বছরের একটি প্রকল্প তৈরি করে প্রায় ৫২ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে সময় পৌরসভার বেশ কিছু সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়। ওই বরাদ্দ শেষ হওয়ার পর আর কোন থোক বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফলে অবহেলিত রয়ে গেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই পৌরসভা।
প্রতিবছর পৌরসভার উন্নয়ন বাজেট কমছে। সর্বশেষ গত অর্থ বছরে বগুড়া পৌরসভার উন্নয়ন বাজেট ছিল ৫০ কোটি ৩৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা। চলতি অর্থ বছরে এটি কমে ৪৬ কোটি ১৪ লাখ ৭৬ হাজারে নেমে এসেছে। আগের অর্থ বছরের বাজেটে বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে ১০ কেটি এবং জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের ৫ কোটি টাকার এক টাকাও মেলেনি। চলতি অর্থ বছরের বাজেটেও বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভলপমেন্ট ফান্ডের ৫ কোটি এবং জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ফান্ডের ২ কোটি টাকা ধরা হলেও আশংকা করা হচ্ছে এবছরও কোন বরাদ্দ নাও মিলতে পারে।
বগুড়া পৌরসভার কার্পেটিং রাস্তা ২২৯ কিলোমিটার। শহরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাস্তা এক বছরেও সংস্কার করা হয়নি। বগুড়া পৌরসভার ২২৯ কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তার মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৪৭ কিলোমিটার রান্তা রয়েছে। বিধ্বস্ত রাস্তাগুলোর মধ্যে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা হলো শহরের সাতমাথা থেকে গোহাইল রোডের পার্করোড অংশ, শহীদ সাইফুল ইসলাম সড়ক, সুত্রাপুরস্থ জেলা পরিষদ মার্কেটের দক্ষিণ পাশে আলফাজ উদ্দিন গেদা সড়ক, তিন নাম্বার রেল ঘুমটি থেকে বাদুড়তলা মুখি সড়ক, ভাঙাড়ী পট্টি থেকে জুবলী স্কুলের সামনের সড়ক, চকযাদু ক্রস লেন, বাদুড়তলার চাড়মা পট্টি’র রাস্তা, চেলোপাড়া, রাজাবাজার, চাঁদনী বাজার (কাঠালতলা) ফতেহ আলী মাজার সড়ক, মালতীনগর নামা পাড়া সড়ক, ভাটকান্দি ব্রিজ সড়কটি সংস্কারের অভাবে সেটি ভেঙ্গে ভেঙ্গে পুকুরের মধ্যে ডুবতে বসেছে, এছাড়া পৌর এলাকার অসংখ্য সড়কের দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বগুড়ার পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী আবু জাফর মো. রেজা জানান, অতিবৃষ্টির কারণে সড়কে কোথাও কোথাও গর্ত দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি না হলে সড়ক ভাল থাকতো। এই সড়কগুলো সংস্কার করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র এড. একেএম মাহবুবর রহমান জানান, পৌরসভার বিভিন্ন সড়কে এখনো গর্ত আছে। বরাদ্দ না থাকায় সেসব সড়কের সংস্কার করা যাচ্ছে না। বরাদ্দ পেলে সড়কগুলোর সংস্কার করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল