৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। দিবসটি উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালে ছবি আঁকছে সামিয়া জাহান। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোটবেলায় বই-পুস্তক পড়ে জেনেছেন ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন আর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের কথা শুনেছেন তার পরিবারের কাছ থেকেও। তার কল্পনায় ভেসে ওঠে বাঙালির আত্মত্যাগের চিত্র। এবার সেই চিত্র স্কুলের দেয়ালে ফুটে ওঠছে তার রং-তুলির আঁচড়ে। তার সঙ্গে ছবি আঁকছে আরও অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী।
মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে পালানোর সময় রাজাকারদের সহায়তায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেসময় তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কে. এম লুৎফুর রহমানসহ কারাগারে আটকে রাখা অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে শহরের কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাক হানাদাররা। শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাকবাহিনীর সদস্যরা কলেজের হোস্টেল, অন্নদা স্কুল বোর্ডিং, বাজার ও গুদামসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে। পরদিন ৭ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে পাক বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে পালাতে থাকে। এর ফলে ৮ ডিসেম্বর বিনা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সদ্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রবেশ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মুক্ত ঘোষণা করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে প্রতিবছর ‘রঙিন হবে আমাদের স্কুল’ কর্মসূচি হাতে নেয় ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামের একটি ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন। গত পাঁচ বছর ধরে চলা এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিবছর একটি বিদ্যালয়ের দেয়াল বিজ্ঞাপন মুক্ত করে সেখানে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ছবি আঁকার উদ্যোগ নেয় ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ সংগঠন। এতে করে দেয়ালগুলো যেমন বিজ্ঞাপন মুক্ত হয় তেমনি শিক্ষার্থীরাও জানতে পারে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
বিদ্যালয়ের দেয়ালের অন্তত ৪৫টি ব্লকে আঁকা হচ্ছে ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ, বদ্ধভূমি, সম্মুখযুদ্ধ, ৭১’র চিঠি, গণহত্যা, শরণার্থীসহ মুক্তিযুদ্ধের নানা ছবি। গত ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই ছবি আঁকার কাজ চলবে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ সংগঠনের ডাকে সাড়া দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু নাট্যমের সদস্যরা ছবি আঁকার কাজে সহযোগীতা করে আসছে।
কলেজছাত্রী সামিয়া জাহান জানান, ছোটবেলায় স্কুলের বই পড়ে এবং পরিবারের কাছ থেকে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জেনেছি। আমাকে ‘যুদ্ধ চলছে’ এমন একটি ছবি আঁকার জন্য বলা হয়েছে। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র আবু সায়েম ভূঁইয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের শরাণার্থীদের একটি ছবি আঁকছি আমি। ফাল্গুনি মল্লিক নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের আরেক ছাত্রী বলেন, আমি ভাষা আন্দোলনের একটি ছবি আঁকছি। এই ছবি আঁকতে পেরে মনে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, দেয়ালে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকে। প্রতিবছর ৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৮ মিটিনে জেলার ৮ বিশিষ্টজনকে দিয়ে ‘রঙিন হবে আমাদের স্কুল’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করানো হয়। এবার এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন জেলার ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা। ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বিবর্ধন রায় ইমন বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এ উদ্যোগ।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক