লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়নের দুটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতাল ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পাঁচ মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে করে প্রতিদিন হাসপাতালে আসা ৫ শতাধিক রোগী সরকারী ওষুধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ আপদকালীন মজুদ থেকে কিছু ওষুধ দিয়ে কোনরকম সেবা চালাচ্ছে। অ্যান্টিবায়েটিকসহ জরুরি অনেক ওষুধের সঙ্কট থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা অতি দরিদ্র রোগীরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়নের দুটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী গত জুলাই মাসে লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন বরাবর চিঠি দিয়ে ওষুধের বরাদ্দ চাওয়া হয়। কিন্তু গত ৫ মাসেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ বরাদ্দ না পাওয়ায় সিভিল সার্জন অফিস থেকে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক জানান, হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে কোনো ধরণের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম লেখা যাবে না। কারণ ওষুধ নেই। এজন্য ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখে বাইরে থেকে ক্রয় করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রায়পুর উপজেলার জালিয়ার চর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী রোগী কুলছুমা বেগম (৪৭) এসেছিলেন রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তিনি জানান, গত আট দিন থেকে জ্বরে ভুগছেন। চিকিৎসক তাকে পাঁচটি ওষুধ লিখে দিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুধু তাকে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। বাকি চার প্রকার ওষুধ বাইরের দোকান থেকে কিনতে বলা হয়। কিন্তু তার কাছে কেনার টাকা নেই। বাকি ওষুধগুলো হাসপাতালে নেই বলে জানানো হয়েছে তাকে।
একই সময় রাখালিয়া গ্রামের খালেদা বেগম বলেন, তিনি খুব দরিদ্র এবং স্বামী অনেক আগে মারা গেছেন। আর ছেলেমেয়েদের বিয়ে হওয়ায় বর্তমানে তার সংসারে তিনি একা। এই বয়সে শরীর সব সময় ঠিক থাকে না। ব্যথা, জ্বর, সর্দি ও বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। প্রতি মাসে দু-একবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেন। হাসপাতাল থেকে দেওয়া ওষুধে সুস্থ থাকেন। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে সব ওষুধ না পেয়ে খুব কষ্টে রয়েছেন। টাকার অভাবে বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেতে পারছেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, জুলাই মাস থেকে হাসপাতাল ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় তাদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ওষুধের চাহিদা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে কিন্তু ওষুধের সরবরাহ মিলছে না।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল গফ্ফার বলেন,ওষুধ সংকটের বিষয়টি কয়েকবার মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। খুব শিগগির ওষুধ পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর কী কারণে ওষুধ সরবরাহ করতে বিলম্ব হচ্ছে তা আমরাও জানতে পারছি না।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা