২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৭:১৯

নাঙ্গলকোটে অরক্ষিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন পরিকোট বধ্যভূমি

ফারুক আল শারাহ, লাকসাম :

নাঙ্গলকোটে অরক্ষিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন পরিকোট বধ্যভূমি

পরিকোট বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞের জ্বলন্ত সাক্ষী কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের পরিকোট বধ্যভূমি। এখানে অসংখ্য নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করলেও মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিচিহ্ন আজও অরক্ষিত। দ্রুত এ বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের পাশাপাশি সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী।

জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের পরিকোট গ্রামে ডাকাতিয়া নদী সংলগ্ন ‘পরিকোট বধ্যভূমি’র অবস্থান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিভিন্ন স্থান থেকে নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে এখানে ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করতো। নির্যাতন-নিপীড়নের চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে এখনো এলাকাবাসী ভয়ে আৎকে উঠে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে দিনের পর দিন জীবিত মানুষকে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখতো। নির্মম হত্যার পর লাশ বস্তা ভরে বাঙ্গড্ডা-চৌদ্দগ্রাম সড়কের পরিকোট বেইলি সেতুর পাশে ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দিত। এছাড়া পাক হানাদার বাহিনী এখানে তিনটি কবর খুঁড়ে অসংখ্য মানুষকে গণকবর দেয়। 

এই বধ্যভূমিতে নির্মম নির্যাতনের শিকার মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম ভূঁইয়া বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। আমার মায়ের মৃত্যুর সংবাদে যুদ্ধকালীন ভাদ্রমাসের ১৫-১৬ তারিখে বাড়িতে আসি। বিষয়টি জানতে পেরে পাক হানাদার বাহিনী রাত ২টার সময় আমার বাড়ি ঘেরাও করে ভোর বেলায় আমাকে আটক করে পরিকোট বধ্যভূমিতে নিয়ে যায়। তারা আমাকে একটি বটগাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালায়। একদিন পর নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে আরো দুইজনকে ধরে নিয়ে আসে। একপর্যায়ে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে তাদেরকে হত্যা করে। আমাকে গাছ থেকে নামিয়ে হত্যা করতে চাইলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারা আমাকে মৃত ভেবে রাস্তার একপাশে ফেলে রেখে চলে যায়। জ্ঞান ফিরলে কোনোমতে পালিয়ে এসে প্রাণে রক্ষা পাই।
 
মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম ভূঁইয়াসহ নাঙ্গলকোটের মুক্তিযোদ্ধারা আক্ষেপ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে স্বাধীন করেছি। নাঙ্গলকোটের পরিকোট বধ্যভূমিতে পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করলেও স্বাধীনতার চার যুগেও এখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি। সীমানা প্রাচীর না থাকায় চরম অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী এ স্থান। 

২০০০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে নাঙ্গলকোটের তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া এ বধ্যভূমির চিহ্নিতকরণ ফলক উন্মোচনের পর আর কেউ-ই বধ্যভূমিটির খবর রাখেনি। ফলে অরক্ষিত অবস্থায় বিলীন হতে চলেছে বধ্যভূমিটি। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে স্মৃতিস্তম্ভ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের পাশাপাশি সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি জানান নাঙ্গলকোট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইছহাক মিয়াসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা এবং এলাকার সচেতন মহল।  

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লামইয়া সাইফুল জানান, নাঙ্গলকোটের পরিকোট বধ্যভূমিটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকার বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। দ্রুত এ বধ্যভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর