বগুড়ায় ভাল কলেজে ভর্তির আশ্বাস দিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং পরে বিচারের নামে ধর্ষিতা ও তার মাকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় আলোচিত মামলার আসামি তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিচার কাজ শুরু হয়েছে। বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এ কে এম ফজলুল হকের আদালতে তুফানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের আদেশ দেয়।
বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (স্পেশাল পিপি) অ্যাডভোকেট নরেশ মুখার্জি বলেন, বুধবার এই মামলাটির বিচারিক কাজ শুরু হয়েছে। মামলা তদন্তÍ শেষে ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এক আসামি পলাতক থাকায় চার্জ গঠন বিলম্বিত হয়। দুই মাস আগে পলাতক আসামি গ্রেফতারের পর চার্জ গঠন শুনানির দিন ধার্য করা হয়। আদালত অভিযোগপত্রে নাম থাকা ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দিয়েছে।
এই মামলার তুফান সরকার ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন তুফানের স্ত্রী তাছমিন রহমান ওরফে আশা, আশার বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান ওরফে রুমকি, আশার মা লাভলী রহমান ওরফে রুমি, তুফানের সহযোগী মো. আতিকুর রহমান ওরফে আতিক, মুন্না, আলী আযম দীপু, মেহেদী হাসান ওরফে রুপম, সামিউল হক ওরফে শিমুল এবং এমারত আলম খান ওরফে জিতু। তুফান সরকার ছাড়া অন্য আসামিরা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুরের প্রভাবশালী বহিষ্কৃৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই একই এলাকার এক ছাত্রীকে ভালো কলেজে ভর্তি করার কথা বলে কৌশলে বাসায় ডেকে নিয়ে যান। সেখানে ওই ছাত্রীকে তিনি ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে ২৮ জুলাই তুফানের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন মার্জিয়া হাসান রুমকি মীমাংসার নামে শিক্ষার্থী ও তার মাকে অপহরণ করে নিয়ে যান। সেখানে নির্যাতনের পর মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে ছেড়ে দিলে অসুস্থ্য অবস্থায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়।
২৯ জুলাই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় ধর্ষণের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেন। দুটি মামলায় তুফান সরকারসহ তার ১০ সঙ্গীর নামে মামলার আসামি করা হয়। বগুড়া সদর থানা পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা, শাশুড়ি রুমি খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ নয় জনকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় তুফান সরকারকে বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহবায়কের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে তুফান বগুড়া কারাগারে আছেন।
ধর্ষণের আলামত সংগ্রহে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ২০১৭ সালের ২ আগষ্ট আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, ধর্ষণের মামলার তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর প্রধান আসামি তুফান সরকারসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
মাসহ মেয়েকে অপহরণ করে নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসানের বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা, নারী কাউন্সিলর মার্জিয়াসহ ১৩ সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
মা-মেয়েকে নির্যাতন ও ন্যাড়া করে দেওয়া মামলায় গত বছরের ৭ নভেম্বর বগুড়ার অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আহমেদ শাহরিয়ার তারিকের আদালত ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এ মামলায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তুফান সরকারের শ্বশুর জামিলুর রহমানকে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন