গলা কেটে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে বগুড়া পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ৩০ ঘণ্টার মধ্যেই আসামিদের গ্রেফতার করেছে তারা।
শনিবার দুপুরের পর তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছে। পরকীয়া প্রেমিককে শায়েস্তা করতেই নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের পথ বেছে নেয় প্রেমিকা রুপালী। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গলা কেটে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলে খুনিরা। গত ৪ ফেব্রুয়ারী রাতে হত্যান্ডের পরদিন পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। হত্যাকান্ডে জড়িত বাবা ও মেয়েকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে নেমেছে।
এর মধ্য দিয়েই দুপচাঁচিয়ার বেড়ুঞ্জ গ্রামে গলাকাটা ও আগুনে পোড়ানো অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশের পরিচয় ও হত্যা রহস্য উন্মোচন করেছে বগুড়া জেলা পুলিশ। নিহত ব্যক্তি সেলিম প্রামানিক (৩২) দুপচাঁচিয়ার খিদিরপাড়া গ্রামের কফির উদ্দিনের ছেলে। সে পেশায় একজন রং মিস্ত্রি ছিল।
শনিবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের অবগত করেন পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম। এসময় পদোন্নততিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী, এএসসি রাজিউর রহমান, ডিবি ওসি আছলাম আলী উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারকৃতরা হলেন আব্দুর রহমান ও তার মেয়ে রুপালী বেগম।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তি তুলে ধরে ব্রিফিংকালে পুলিশ সুপার জানান, রুপালীর স্বামী দেড় বছর যাবত সৌদি আরব থাকে। নিহত সেলিম এবং রুপালীর মধ্যে ছোট বেলায় প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের দুজনের বিয়ে অন্যত্র হলেও মোবাইলে যোগাযোগ অব্যহত ছিল। রুপালীর স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার পর দুজনের পরকীয়া আরো গভীর হলে বিভিন্ন সময়ে একান্তে মিলিত হয়। একপর্যায়ে সেলিম রুপালীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে নাকোচ করে। সেলিম আগে থেকেই তাদের একান্তে মিলিত হওয়ার দৃশ্যগুলি গোপনে ভিডিও করে রাখে। রুপালী সেলিমকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলে ক্ষুব্ধ সেলিম ইমোর মাধ্যমে একান্তে মিলিত হওয়ার দৃশ্য সৌদিতে অবস্থানরত রুপালীর স্বামী ইকরামুলের কাছে পাঠায়। ইকরামুল বিষয়গুলো রুপালীকে জানায়। সেলিম রুপালীকে হুমকি দেয় যে তাকে বিবাহ না করলে তার কাছে থাকা ভিডিও ফুটেজগুলি ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে। এ বিষয়গুলি নিয়ে রুপালী তার বাবা আব্দুর রহমানের সাথে পরামর্শ করে সেলিমকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করতে থাকে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়েতে রাজি হওয়ার পাশাপাশি সেলিমকে খুন করার জন্য পূর্বপরিচিত খুনির সাথে সলাপরামর্শ করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় রুপালী সেলিমকে পালিয়ে তার বান্ধবির বাড়ীতে গিয়ে বিয়ে করার জন্য মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে দুপচাঁচিয়ার বড়কোল ও বেরুঞ্জ গ্রাামের বিস্তির্ণ ফসলের মাঠে যায়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রুপালীর বাবা এবং তার সহযোগী ৩ তিনজন সেলিমকে হাত পা রশি দিয়ে বেঁধে মুখ ও মাথা স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। এরপর লাশ যেন কেউ চিনতে না পারে সে জন্য সেলিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ তার অন্যান্য পরিধেয় জিনিসপত্র তার বুকের উপর রেখে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
হত্যাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার পূর্বে হত্যাকান্ড ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য ৬ টি কনডম ঘটনাস্থলের পার্শ্বে ফেলে যায়। এঘটনায় নিহত সেলিমের বাবা কফির উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দুপচাঁচিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সুপার জানান, হত্যার রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কারণ এবং নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
বগুড়ার ওসি ডিবি আছলাম আলী পিপিএম জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের ৩০ থেকে ৩৫ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যা রহস্য উন্মোচন হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন/হিমেল