পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় হতদরিদ্র ভূমিহীন পরিবারের মাঝে আশ্রয়ের জন্য দেয়া আবাসন কেন্দ্রগুলোর অবস্থা জীর্ণদশা। সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ আবাসন কেন্দ্রের ঘরের চাল ও বেড়ার টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আবাসনের প্রতিটি ব্যারাকে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করা এখন অনোপুযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ওইসব আবাসনের খেটে খাওয়া ও দিনমজুর মানুষগুলো ঝড় বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে এ অঞ্চল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে অনেকেই গৃহহারা হয়ে পড়ে। সরকার হতদরিদ্র ভূমিহীন পরিবারকে মাথা গোঁজার জন্য উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এসব আবাসন কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করে দেয়। এর পর ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস, ২০০৯ সালে আইলা, ২০১৩ সালে মহাসেন, ২০১৫ সালে কোমেন, ২০১৬ সালে রোয়ানু, ২০১৭ সালে মোরা, ২০১৯ সালে ফণী, ২০১৯ সালে বুলবুলের প্রভাবে আবাসন কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মেরামত করা হয়নি ঘরগুলো। কিন্তু সঠিক কোন তদারকি না থাকায় ক্রমশই বেহালদশায় পরিণত হয়।
সর্বশেষ সুপার সাইক্লোন আম্ফান আবাসন কেন্দ্রে ঘরের চাল ও বেড়ার টিন উড়িয়ে নিয়ে যায়।
সরেজমিনে নীলগঞ্জ আবাসনে গিয়ে জানা যায়, এ আবাসনে ২৮০টি পরিবার বসবাস করে আসছে অনেক বছর ধরে। এ পরিবারগুলো তিনটি ব্যারাকে বসবাস করছেন। প্রথম ব্যারাকটিতে ৮০ টি পরিবার, দ্বিতীয়টিতে ৭০ টি পরিবার ও তৃতীয় ব্যারাকে ১৩০ টি পরিবার। এই পরিবারগুলোর বেশির ভাগই দিন মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। আন্ধারমনিক নদীর তীরে অবস্থানের কারণে ঘূর্ণিঝড়,জলোচ্ছ্বাসসহ ছোট খাটো ঝড় বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করতে হয় তাদের। বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে কোন রকম বসবাস করলেও দিন দিন ভগ্নদশায় পরিণত হচ্ছে।
মহিপুর ইউনিয়নের নিজ শিববাড়িয়া আবাসন কেন্দ্রটির অবস্থা আরো ভয়াবয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে ফতেপুর আবাসন কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ জরাজীর্ন অবস্থায় রয়েছে। আবাসন তৈরি করার সময় নলকূপের ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে তার কোন অস্তিত্ব নেই। ব্যারাকের টিন, লোহার এ্যঙ্গেল অনেক আগেই খোয়া গেছে। অনেক ঘরের এ্যাঙ্গেল ও টিনে মরিচা ধরে গেছে। যার কারণে এখন অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় রয়েছে ঘরগুলো। আবার কিছু কিছু ব্যারাকে মানুষজন না থাকায় গরু-ছাগল রাখতে দেখা গেছে।
নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সিডরের পরবর্তী সময় এ ইউনিয়নের ৬ টি আবাসন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে ঘরগুলো সম্পূর্ণ জরাজীর্ন অবস্থায় রয়েছে। এসব আবাসন কেন্দ্রের আধিকাংশ ব্যারাকে লোকজন নেই। যারা আছে তারাও বৃষ্টির সময় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, আম্ফানের প্রভাবে আবাসনগুলোতে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট তহশিলদারকে বলা হয়েছে। আবাসনের ঘর মেরামতের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, আবাসনগুলোর অধিকাংশই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরেছে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল