বাড়ির ছাদের যেদিকে চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। ফুলে ফলে ছেয়ে গেছে ছাদের সাজানো বাগান। বাড়ির চারপাশের বেলকনিতেও ঝুলছে ঝুলন লতা। ফুটেছে নানান রঙের ফুল। ছাদ বাগান যেন ফুল-ফলের সমারোহ। বাগানের সবুজের সমারোহ দেখে দেখে যে কারোই চোখ জুড়িয়ে যাবে। ছাদেই যেন প্রকৃতির মেলা।
বাগানে কি নেই। তাকালেই দেখা যাবে গোলাপ, গাঁদা, কুন্দ জুঁই, এরোমেটিক জুঁই, বেলি ফুল, সোর্ড লিলি, জল গোলাপ, ওয়াটার পপি, ব্লুডেজ, রোজ ক্যাক্টাস, দোপাটি, সাদা ও লাল হাসনা হেনা, কাঞ্চন, সোনালু, করবী, কাঁটা মেহেদী, জ্যাট্রফা, জিনিয়া, কাঠ গোলাপ, চন্দ্রপ্রভা, টেকোমা, টগর, কলাবতীসহ একশত জাতের ফুল।
আবার লিলিয়াম, এমারিলিলাস লিলিসহ নানান জাতের লিলি, নানান রকম শোভা বর্ধন করা পাতা বাহার গাছ। অন্যদিকে পেয়ারা, আম, লাল আমলকী, মালটা, তেঁতুল, লিচু, আনার, লেবুসহ ৫০টি বিভিন্ন জাতের ফলের গাছ। এছাড়াও ছাদে বিভিন্ন জাতের সবজীও রয়েছে। শখের বশে গড়া এই বাগান তো নয় যেন এক টুকরো ভালোবাসা।
করোনার কারণে মানুষের জীবনের ছন্দপতনের সময় প্রশান্তি ও বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায় এই প্রকৃতি। আর সেই প্রকৃতিকে আরও সুন্দরভাবে এসময়ে গড়ে তুলেছেন এমনই একজন গাছ প্রেমী ও সৌখিন মানুষ দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিরীন বকুল। নিজের সন্তানের মতই এ বাগানের প্রতিটি গাছেকে ভালবাসেন তিনি। মানুষকে গাছ উপহার দিতেও ভালবাসেন তিনি। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে তিনি নিজ খরচে গাছ পাঠিয়েছেন।
তিনি ফুলবাড়ী উপজেলার রামভদ্রপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষিকা। ফুলবাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর এলাকায় নিজ বাড়ির ছোট্ট ছাদে তিনি প্রায় বছর দুয়েক হতে বাগান করছেন। এই স্কুল শিক্ষিকার সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ৩০ জাতের পর্তুলিকা, যা আমরা ঘাসফুল নামে সবাই চিনে। এর ফুলের সৌন্দর্য চোখ ফেরাতে দেয়না, দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
শখ পুরনের পাশাপাশি করোনার এই সময়ে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমেও অর্ডার নিয়ে এই পর্তুলিকা বিক্রয় করে বেশ কিছু টাকা আয়ও করেছেন বলে জানান স্কুল শিক্ষিকা শিরীন বকুল।
গাছ প্রেমী ও সৌখিন মানুষ স্কুল শিক্ষিকা শিরীন বকুল জানান, প্রত্যেকটা গাছ সংগ্রহের পেছনে রয়েছে অনেক ত্যাগ, কষ্ট আর শ্রম। যখন যেখানেই যান সেখানেই তার পছন্দের গাছটি খোঁজেন। কখনো বাসে, কখনো ট্রেনে করে যেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি গাছ কিনে আনেন। এ পর্যন্ত তিনি তার বাগানে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এছাড়া সারা বাংলাদেশে অনলাইনের মাধ্যমেও তিনি গাছ কিনে থাকেন।
স্কুল শিক্ষিকা শিরীন বকুল বলেন, গাছের মত প্রকৃত বন্ধু আর কে আছে। শুধু তিনি তার বাসায় নন, স্কুলেও একই ভাবে গাছ লাগানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নিজের বাগান থেকে গাছ নিয়ে গিয়ে তার কর্মরত স্কুলেও গাছ লাগিয়েছেন। সেই বাগানে এখন ফুল ফুটেছে। স্কুল বন্ধ না থাকলে এতদিন তিনি স্কুলকেও সবুজের ঘেরা ছায়ানীড় করে তুলতেন। মানুষকে গাছ উপহার দিতেও ভালোবাসেন তিনি। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বৃক্ষপ্রেম জাগাতে তিনি গাছ উপহার দিয়ে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, ছোট বেলা থেকেই তিনি যেখানে যতটুকু জায়গা পেতেন গাছ লাগিয়ে দিতেন। তার লাগানো রঙিন, পাতাবাহার ১৫বছর যাবত তার আঙিনায় শোভা ছড়িয়ে যাচ্ছে। সকলের উদেশ্যে তিনি বলেন, আসুন বেশি বেশি করে গাছ লাগাই, বাগান করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সবুজের সমারোহে গড়ে তুলি।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর