ফেসবুকের কল্যানে দীর্ঘ ৯ বছর পর পরিবারে ফিরে গেলেন নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার শতকুঁড়ি গ্রামের সোহেল রানা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পঁচা আম কুড়িয়ে খাওয়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বদলে যায় সোহেলের জীবন। তাকে ফিরে পেয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা থেকে শুরু করে পরিবারের সবাই খুব খুশী। ভিডিওতে সোহেলকে দেখে সবার চোখ ছলছল করে উঠে। এরপর যখন মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে কথা হয় তখন তো অনেকেই বাকরুদ্ধ।
গত ১৩ জুন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কেন্দ্রস্থল সম্প্রতি ভেঙ্গে ফেলা সুপার মার্কেটের খালি জায়গায় স্তুপ করে ফেলে রাখা পঁচা আম খাচ্ছিলেন মাঝ বয়সি সোহেল রানা। এই দৃশ্য দেখে ফেলেন তরুণ ব্যবসায়ি ও সেবামূলক সংগঠন জাগো ফাউন্ডেশনের অঙ্গ সংগঠন ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার স্বেচ্ছাসেবক তারেক আজিজ। তরুন ব্যবসায়ী তারেক আজিজের বাড়ি জেলার সরাইল উপজেলায়। তিনি পরিবার নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মধ্যপাড়া বর্ডার বাজারে এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
পঁচা আম খাওয়ার দৃশ্য দেখে তারেক আজিজ সেখানে গিয়ে তাকে এক কেজি আম কিনে দেন। পরে ১৮ জুন রাতে পৌর এলাকার কাউতলীতে পুনরায় তারেক আজিজ তাকে পেয়ে নিজ বাসায় নিয়ে আসেন। কথা বলে জানতে পারেন ওই ব্যক্তির বাড়ি নাটোর জেলায়। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে ভিডিও দেয়ার পাশাপাশি লেখালেখি শুরু করেন। নাটোরে কর্মরত সংশ্লিষ্টদের মোবাইল ফোন নম্বর যোগাযোগ করে স্থানীয়ভাবে সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ করেন। অনেকের কাছে ভিডিওটি পাঠান।
তারেক আজিজ জানান, স্থানীয় এক যুবক ওই ব্যক্তিকে চিনতে পেরে পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করেন। তখনই জানা যায়, ওই ব্যক্তি নয় বছর ধরে নিখোঁজ। পরিবারের সদস্যরা ভিডিও কলে তাকে দেখে সোহেলের পরিচয় নিশ্চিত করেন। তখন আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গত ২১ জুন রাতে সোহেলের পরিবারের লোকজন এসে তাকে নিয়ে যায়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সোহেল রানা নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার শতকুড়ি গ্রামের মজিদ শাহ্’র ছেলে। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। স্ত্রী এবং তৌফিক হাসান ও সানিয়া আক্তার নামে দুই শিশু সন্তান রয়েছে তার। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। একদিন হঠাৎ করেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করেও সোহেলকে পাওয়া যায়নি। যে কারণে তাকে মৃতই ধরে নিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
সোহেলের ষষ্ঠ শ্রেণি পরয়া ছেলে তৌফিক জানায়, বাবাকে পেয়ে সে খুবই খুশি। বাবা আসছে শুনে নানার বাড়ি থেকে ছুটে এসেছে সে। খুব ছোট বয়সে বাবা নিখোঁজ হয় বলে খুব একটা কিছু মনে নেই তার। তবে দেখে সে বাবাকে চিনতে পেরেছে।
সোহেল রানার ভাই মোঃ উজ্জল বলেন, ভাই বেঁচে আছে আমরা সেটা চিন্তাও করতে পারিনি। গত সোমবার সকালে ভাইকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছাই। ভাই এখন খুব বেশি কথা বলছে না। মানসিক কিছু সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে। আমার বৃদ্ধ বাবা-মা ভাইকে পেয়ে খুব খুশি। এত বছর পর ফেসবুকের কারণেই ভাইকে খোঁজে পেলাম।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর