৮ জুলাই, ২০২০ ২০:২২

ফসল ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন যমুনা পাড়ের মানুষ

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

ফসল ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন যমুনা পাড়ের মানুষ

কাজিপুরের খুদবান্দি এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।

বন্যায় স্বপ্নের ফসল ও ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন যমুনা পাড়ের মানুষ। যমুনার পানি কমতে শুরু করায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় প্রতিদিন যমুনা গর্ভে বিলীন হচ্ছে চিরচিনা বসতভিটা-ফসলি জমি। সবকিছু হারিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে যমুনা পাড়ের ভাঙন কবলিত মানুষগুলো।

ভাঙন অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন একটু একটু সিরাজগঞ্জ জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে আগাম বন্যা হওয়ায় কৃষকের সোনালী ফসল পাট, কাউন, তিল, সজ ও বাদাম নষ্ট হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। আগামী দিন কিভাবে কাটাবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কৃষকেরা। বন্যা ও ভাঙন কবলিত মানুষ খোলা আকাশে আবার ওয়াপদাবাঁধে থাকলেও সরকার বা জনপ্রতিনিধি কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন এসব মানুষ। 

সরেজমিনে জানা যায়, জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। পানি বাড়ার সাথে সাথে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার নদী তীরবর্তী বিস্তৃর্ণ এলাকাসহ এনায়েতপুর থানার আড়কান্দি থেকে শাহজাদপুরের পাঁচিল পর্যন্ত ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। উত্তরের কাজিপুর উপজেলার খুদবান্দি এলাকাতেও শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অব্যাহত ভাঙনে ফসলি জমি, বসতভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও খেলার মাঠ নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। আর ভাঙন কবলিত মানুষ শুধু দুচোখে অশ্রু ফেলে চেয়ে চেয়ে দেখছে। 

চিরচেনা বসতভিটা হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। সামান্য ঘর তোলার জায়গা না থাকায় ঘরগুলো স্তুপ করে রাখছে কেউবা ভাড়ায় জমি নিয়ে ঝুপড়ির মতো ঘর তুলে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। কেউবা ওয়াপদা বাঁধের উপর, বাঁধের নীচে ঘর তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায় ওয়াবাধার ধারে ঝুুপড়ি আর খোলা আকাশের নীচে রান্না করে তাদের জীবন চলছে। নেই কোনো স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, নেই বিশুদ্ধ পানি। চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যেও রয়েছে ভাঙন কবলিতরা। 

এছাড়াও এবারের বন্যায় জেলার চরাঞ্চলের প্রায় চার হাজার হেক্টর জমির পাট, তিল, কাউন, বাদাম, বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকেরা চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। এছাড়াও পানিবন্দী রয়েছে এখনো প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এসব মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে যে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা একেবারে নগন্য। অনেক এলাকায় এখনো কোন খাবার পৌঁছেনি। এ ভাঙন ও বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

তারা বলছে, সরকার টেলিভিশন-পত্রপত্রিকায় বলছে, খাদ্যের কোনো সমস্যা নেই অথচ আমরা কষ্টে থাকলেও দেখার কেউ নেই। 

শহরের ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নেয়া বানভাসী সুরমা, মনিজা ও মালেকা খাতুন জানান, প্রায় ১৫দিন যাবত হোসেনপুর ওয়াপদা বাঁধের নিচু এলাকায় প্রায় দেড়শত ঘরবাড়ী পানিতে তলিয়ে আছে। সবাই ওয়াপদাবাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। করোনার কারণে কাজও ঠিকমত করতে পারছে না কেউ। কষ্টে থাকলেও কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না। ইউএনও অফিসে দুমুঠো চালের জন্য গেল দুরদুর করে তাড়িয়ে দেয়।

কাওকোলা ইউপির কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, আগাম বন্যার কারণে বিপুল পরিমাণ সজ নষ্ট হয়ে গেছে। আমার মতো এলাকার কয়েক হাজার কৃষকের ধান, তিল, কাউন, বাদাম ও সজ নষ্ট হয়ে গেছে। 

ভাঙনকবলিত খুদবান্দি এলাকার নুরুল ইসলাম ও আব্দুর রাজ্জাক জানান, পানি কমার সাথে সাথে কাজিপুর উপজেলার কাটাতলা নৌকাঘাটে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। আমাদের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কোনমতে ঘরগুলো সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে রেখেছি। এনায়েতপুর জালালপুর ইউপির ভাঙন কবলিতরা বলছেন, বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করার পরও ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। কেউ আমাদের দিকে একটু সুনজর দেয় না। 

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ভাঙন এলাকার প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। ভাঙনরোধে সরকারি বরাদ্দ বা নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানান, চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিতরণও শুরু হয়েছে। 

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর