কানাডায় প্রতিবছরের ন্যায় এ বছর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান 'বড়দিন' বা 'ক্রিসমাস ডে' জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রদেশের প্রিমিয়ার এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ এখনো উদ্বিগ্ন রয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার নিয়ে। প্রতিনিয়তই কানাডার বিভিন্ন প্রদেশের ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে করোনাভাইরাস, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, ব্যাপক চাপ পড়ছে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র গুলিতে।
যে আয়োজনকে ঘিরে কানাডায় দুই মাস আগে থেকেই চলে বিভিন্ন পার্টি ও অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান, এ বছর তা আর চোখে পড়ছে না আতঙ্কের ভয়ে।
বিভিন্ন প্রভিন্সের প্রধান এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ এই দিনটিতে নিজেদের পরিবার পরিজন নিয়ে নিজ ঘরেই প্রার্থনা এবং নানা আয়োজন করার পরামর্শ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে কোনো অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত লোকের জনসমাগম ক্ষতির সম্মুখীন হবে কেননা কানাডায় এখনো করোনাভাইরাস কমার কোনো লক্ষণ নেই।
বড় দিনের ছুটিতে নাগরিকদের বাড়ির বাইরে জমায়েত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন টরন্টো স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. এইলিন দ্য ভিলা। তবে নতুন এক সমীক্ষা বলছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমূখী হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে কান দিতে রাজি নন অন্টারিওর অনেকেই।
এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. এইলিন দ্য ভিলা বলেন, পরিস্থিতি খুবই খারাপ এবং ভাইরাসটি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ বছরকে অন্যান্য বছরের মতো ভাবলে হবে না। ডিসেম্বরের প্রথম সাত দিনেই টরন্টোতে নতুন করে ৪ হাজার ১০০ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৮ জন মারাও গেছেন। সংখ্যাটা এতোই বেশি যে, আমি কেবল এটুকুই বলতে পারি, পরিস্থিতি খুবই গুরুতর। এর সঙ্গে দ্বিমত করার কিছু নেই। টরন্টোতে কোভিড-১৯ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় ঘরের মধ্যে কোনো ধরনের উৎসব উদযাপন পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলতে পারে। আমরা যা দেখছি, তাতে ২৪ ডিসেম্বর থেকে নতুন বছরের শুরু পর্যন্ত সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। কারণ এই সময়টাতে লোকজন পরস্পরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বেশি করবেন।
অ্যাঙ্গাস রিড ইনস্টিটিউটের নতুন এক সমীক্ষা বলছে, ২৭ শতাংশ অন্টারিওবাসী ছুটির মধ্যে স্থানীয় বন্ধু ও পরিজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ভাবছেন। ৮ শতাংশ বাসিন্দা আবার অন্য কমিউনিটির বা প্রদেশের বাইরে গিয়ে সাক্ষাতের পরিকল্পনাও করছেন।
তাদের এ পরিকল্পনা স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বড় দিনের ছুটিতে কেবলমাত্র পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রদেশের বাইরে গিয়ে বড় দিন উদযাপনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, 'ক্রিসমাস ডে'তে কানাডায় থাকে ছুটির আমেজ, দেশটির নাগরিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ-ফূর্তিতে নিজেদের মধ্যে সময় কাটায়। আলোক সজ্জায় সজ্জিত হয় অফিস আদালত আর কেনাকাটার বিভিন্ন মল। পরিবহনগুলিতে লেখা হয় "হ্যাপি হলিডে"। যেন এক আনন্দের আমেজ। সবকিছু ঠিক থাকলেও এ বছর কেন জানি ম্লান হয়ে আছে, থেমে আছে গতি। ভারি হচ্ছে হৃদয়ের অনুভূতি।
তারপরও প্রতীক্ষিত ভ্যাকসিন ইতিমধ্যেই প্রয়োগ হচ্ছে কানাডাবাসীর মধ্যে সীমিত আকারে। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কানাডাবাসী আবার ফিরে যাবে নতুন দিনে, দেখতে পাবে সেই আকাঙ্ক্ষিত স্বাভাবিক জীবন, সে আশায়ই বুক বেঁধে আছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন