গতবারে আলুর ভাল দাম পাওয়ায় এবারে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ বেশি হয়েছে। আবহাওয়া ভাল, দীর্ঘমেয়াদী শৈত্যপ্রবাহ না থাকায় এবং রোগ-বালাই কম হওয়ায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের চোখেমুখে হাসি ফুটলেও ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছে কৃষক।
তবে বিদেশে আলুর রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি আলুর বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে নানামুখী খাবার তৈরিতে উৎসাহ সৃষ্টি করার জন্যে সরকারের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলে কৃষক লাভবান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গতবার ৪৪,৯০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় ৪৮,৮৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এবারে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০,৭১৩৬০ মেট্রিক টন। বর্তমানে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৮ টন থেকে ২২ টন পর্যন্ত আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। উচ্চ ফলনশীল আলু জাতের মধ্যে কারেজ, কার্ডিয়াল, স্টারিক্স, ডায়মন্ড, রুমানা, গ্রানুলা, কাবেরী আর স্থানীয় আলুর মধ্যে সাদা পাটনাই, চল্লিশা, শীল বিলাতী, লালপাকড়ী, বগুড়াই চাষ হয়েছে।
চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতাঁড়া ইউপির দগনাথপুর গ্রামের আইনুল হক জানান, আলু চাষের শুরু থেকে উত্তোলন পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। যেসব কৃষক আগাম জাতের আলু চাষ করে প্রথমদিকেই বাজারে বিক্রি করেছে তারা লাভবান হয়েছে। তখন বাজারে আলুর দাম বেশি ছিল। কিন্তু দিন দিন আলুর দাম কমে যাচ্ছে। কারণ আলুর উৎপাদন এবার বেশি হয়েছে। এখন যারা আলু উঠিয়ে বিক্রি করছে সেসব আলু বিক্রি করলে খরচ উঠলেও কয়েকদিন পরে যারা আলু বাজারে বিক্রি করবে তারা লোকসানের মধ্যে পড়বে। তবে যারা কোল্ড স্টোরে রাখার জন্য আলু চাষ করেছে তাদের সমস্যা নেই। আর কোল্ড স্টোরে যারা আলু রাখবে সেসব আলু উঠবে ফাল্গুন-চৈত্র মাসের দিকে। তারা কোল্ড স্টোরে রেখে ভাদ্র-আশ্বিন মাসের দিকে বিক্রি করবে বাজারে।
নবাবগঞ্জের মাহামুদপুরের পাদুহার গ্রামের আলু চাষি ফরিদুল ইসলাম জানান, সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। বাজারের যে অবস্থা আলুর দর নিয়ে চিন্তায় আছি। বৃহস্পতিবার ৮০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ৪০০-৫০০ টাকা। প্রতি কেজি বিক্রি মাত্র ১০ টাকা। এরপর প্রতিদিনই দর কমতে থাকলে, ভালো ফলন হয়েও খরচের টাকা ওঠবে না। বরং লোকসান হবে।
বিরল উপজেলায় কাশীডাঙ্গা গ্রামের রঘুনাথ রায় বলেন, বাম্পার ফলন হয়েছে। চার বিঘা জমিতে কার্ডিয়াল জাতের আলু চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ৬০-৭০ মন পর্যন্ত হতে পারে। জমি থেকে আলু তুলতে শ্রমিকদের মজুরি এবং উপজেলার বাইরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় স্থানীয় মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কাছে আলু বিক্রয় করতে হয় কম দামে। ফলে কৃষকের চেয়ে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্ব ভোগী আলু ব্যবসায়ীরা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইকবাল বলেন, এবার জেলায় প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ বেশি হয়েছে এবং ভাল ফলনও হয়েছে। রোগ-বালাই কম। আগাম আলুতে কৃষকরা ভাল দাম পেয়েছে। পরবর্তী সময়েও আলুর দাম পাবে কৃষকরা।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন