রাজবাড়ীতে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে লিগ্যাল এইডের সেবা। কোন হয়রানি ছাড়াই লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে সেবা পাচ্ছেন জেলার ৫ উপজেলার হতদারিদ্র অসহায় মানুষেরা। আদালত প্রাঙ্গনের ভেতর এসব সেবায় খুশি সাধারণ মানুষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার কারণে আদালতের মামলা জট হ্রাস পাচ্ছে।
রাজবাড়ী লিগ্যাল এইড কার্যালয় সূত্রে জানা যায, গত বছর লিগ্যাল এইড অফিসে মোট ২০৪টি আবেদন জমা পড়ে। আবেদনের মধ্যে ১০১টি আবেদন সফলভাবে নিষ্পত্তি হয়। যার মাধ্যমে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৪২৯ জন সুফল পায়। এছাড়া জেলার বিভিন্ন হতদরিদ্রের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের ফৌজদারী, দেওয়ানী ও পারিবারিক মামলা নিষ্পত্তির জন্য শতাধিক আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। গত বছর সফলভাবে পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তিকালে ৫৩ লাখ ৩২ হাজার ৭০০ টাকা এডিআরের মাধ্যমে ক্লায়েন্টকে বুঝে দেওয়া হয়।
লিগ্যাল এইড কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, আদালত প্রাঙ্গণের প্রবেশ পথে কিছুদূর সামনে অফিসটি অবস্থিত। সেখানে নারী, শিশুসহ সেবাপ্রার্থীদের আনাগোনা। সেবাগ্রহীতাদের কথা শুনে পরামর্শ দিচ্ছেন সিনিয়র সহকারী জজ ও রাজবাড়ী জেলা লিগ্যাগ এইড অফিসার সৈয়দ আবদুল্লাহ-আল-হাবীব।
বালিয়াকান্দি উপজেলার বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের বালিয়াকান্দি গ্রামে আফরোজা খাতুন বলেন, তিন বছর পূর্বে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বছরখানেক পূর্বে তার স্বামীর বাড়ীর লোকজন আমার মেয়েকে নির্যাতন করতো। পরে স্থানীয়ভাবে সমাধান না হওয়ার কারণে মামলার আশ্রয় নেই। সেখান থেকে মামলাটি লিগ্যাল এইড অফিসে জমা পড়ে। তিন মাসের মধ্যে উভয় পক্ষ লিগ্যাল এইড অফিসে বসে সমাধান পাই। বর্তমানে শিশুটি আমাদের কাছে রয়েছে। বড় হলে ওর বাবার কাছে চলে যাবে। আমি আমার মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিবো।
উপকারভোগী গোয়ালন্দ উপজেলার মোজাম্মেল হক বলেন, আমার নামে আমার স্ত্রী খুলনার আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলার পর আমি হতাশ হয়ে পড়ি। পরে এক আইনজীবীর পরাশর্মে রাজবাড়ী লিগ্যাল এইড অফিসে আবেদন করি। সেখানে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে মামলা নিষ্পতি হয়। দেনমোহর এবং ভরনপোষণ বাবাদ টাকা দিয়ে আমাদের বিষয়টা সমাধান হয়। আমি বর্তমানে ভালো আছি।
জেলার বালিয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নায়েব আলী শেখ বলেন, অনেক সময় নারী-শিশু সহ দাম্পত্য কলহের ঘটনা আসলে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। সেগুলো লিগ্যাল এইড অফিসে পাঠিয়ে দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাধান হয়। এছাড়া অনেকের মামলা চালানোর মতো অর্থ না থাকলে সেখানে পাঠিয়ে দেই। বিনা পয়সায় তারা আইনজীবী পেয়ে থাকেন।
রাজবাড়ী জেলা বার এাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড আনিছুর রহমান বলেন, রাজবাড়ীতে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আইনগত সেবার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অনেক মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। মামলা জট কমে আসছে। প্রান্তিক অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য এই অফিসটি খুবই কার্যকর।
রাজবাড়ী জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সৈয়দ আবদুল্লাহ-আল-হাবীব বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিটি মানুষের বিনামূল্যে আইনগত সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর। জেলার কোন দারিদ্র মানুষ যেন আইনগত সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয় সেই দিকটি বিবেচনা করে এই অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া আদালতে দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলা আমাদের কাছে আসলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। এতে করে আদালতের মামলা জট হ্রাস পাচ্ছে। সাধারণ মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যে সুবিধা পাচ্ছে।
জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান এবং জেলা ও দায়রা জজ নিলুফার সুলতানা বলেন, সব ধরণের মানুষের আইনগত সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড অফিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে অনেক মামলা জট কমেছে। আমাদের জেলায় লিগ্যাল এইড কার্যক্রম অত্যন্ত সফলভাবে চলছে। যেকোন মানুষের আইনগত সেবা পাওয়ার জন্য এই অফিসে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা