পাবনায় পদ্মায় এক যুবলীগ নেতা বালু উত্তোলন করায় ভাঙনের আশঙ্কায় আতঙ্কে পড়েছেন এলাকাবাসী। সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রুবেলসহ একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও পদ্মা নদী থেকে অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন তারা। এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তায় নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন এলাকার পদ্মা নদীর হাসামপুর, বড়খাপুর এবং নাজিরগঞ্জ এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছে।
এতে একদিকে পদ্মা পাড়ের বাড়ি-ঘর, ফসলী জমি ও মূল্যবান গাছ-পালা ভাঙনের মুখে পড়ছে, অন্যদিকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের চলাচলের রাস্তাঘাট চরম ভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। তারা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে প্রতিকার চেয়েছেন।
সরেজমিনে নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের গৌরাঙ্গ বাজার ও বকাউলকান্দির উত্তর পাশে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। ইউনিয়নটির ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা তাদের আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। এদিকে সাতবাড়িয়ার কিছু এলাকায়ও এলাকার প্রভাবশালী মহল এই কাজ করে যাচ্ছেন দেদারছে, যেন দেখার কেউ নেই।
সুজানগর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুজানগরে সরকারিভাবে কোন বালুমহাল নেই। কিন্তু তারপরও উপজেলার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রকাশ্যে পদ্মা নদীর ওই সকল পয়েন্ট থেকে নিষিদ্ধ শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন দিয়ে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে।
পদ্মাপাড়ের হাসামপুর গ্রামের আব্দুল ওহাব বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত পদ্মা নদীর ঐ সকল পয়েন্ট থেকে শক্তিশালী ড্রেজার দিয়ে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পদ্মা পাড়ের মহনপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে উত্তোলন করার কারণে পদ্মা নদীর নিকটবর্তী বরখাপুর, হাসামপুর, কামারহাট, গোয়ারিয়া এবং মালফিয়া গ্রামের শত শত বাড়ি-ঘর, ফসলী জমি, মূল্যবান গাছপালা এমনকি নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিস পর্যন্ত ভাঙনের মুখে পড়েছে। বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ঐ সকল বাড়ি-ঘর, ফসলী জমি, গাছ-পালা ও ভূমি অফিস নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রুবেল নিজেকে বালি উত্তোলনের সাথে সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে বলেন, সুজানগরে কারা বালি উত্তোলনের সাথে জড়িত সেটি পাবনা জেলার সবাই অবগত আছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার আহমেদ রাজু পদ্মা নদীতে বালি বিচ্ছিন্ন ভাবে উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি নিজে বালি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত নাই, কারা আছে বলতেও পারবো না। আর যদি নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান রুবেলের বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পাই অবশ্যই দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমিও এই বালি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সোচ্চার আছি।
এ ব্যাপারে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রওশন আলী বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে মাঝে-মধ্যেই নদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করার পাশাপাশি বালু ব্যবসায়ীদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও কঠোর আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল