১৬ এপ্রিল, ২০২১ ২০:২৩
কুড়িগ্রামে

দুশ্চিন্তায় বোরো চাষিরা, মরে যাচ্ছে ধানের পাতা-শীষ

খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

দুশ্চিন্তায় বোরো চাষিরা, মরে যাচ্ছে ধানের পাতা-শীষ

পরপর কয়েক দফা বন্যায় জেলার কৃষকেরা আমন আবাদে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এরপরও কষ্ট করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন আবাদ করে কিছুটা লাভের মুখ দেখেন। এ বছর আগাম বোরো ধান লাগিয়ে আরও লাভের আশায় অনেক কৃষক বোরো খেত নিয়ে পরিচর্যা করে আসছিলেন। এরই মধ্যে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের পাতা ও শীষে এক প্রকার রোগ ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। এ ধানের শীষ শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ কারণে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাপকভাবে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এ উপজেলার অনেক চাষি বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে নেমে পড়েন। অতি সম্প্রতি বোরোর শীষ বের হওয়ার সাথে সাথে কৃষকদের মন ভরে উঠে। হয়তো আর মাত্র কয়েকদিন পরেই কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তুলবেন, এ প্রত্যাশা সবার। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। 

নষ্ট বোরো খেতগুলো দূর থেকে দেখলে মনে হয় ধান পেকে গেছে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা যায়, এখনও কাঁচা ধান। ধানের পরিপক্বতা আসার আগেই  শীষ চিটা হয়ে শুকিয়ে সোনালি রঙ ধারণ করেছে। সোনালি রঙে মনে হচ্ছে ধানগুলো সব পেকেছে।

তবে কৃষিবিভাগ জানায়, এটি এক ধরনের ব্লাস্ট রোগ। খেতে অধিক মাত্রায় নাইট্রোজেন সার ব্যবহার ও হঠাৎ করে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়া, দিনে গরম পড়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, তারা যথাসময়ে কৃষি বিভাগের সুপরামর্শ না পেয়ে এরকম পরিস্থিতিতে পড়েছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শের অভাবে এ রোগ দমনে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। 

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে চাষাবাদ হয়েছে  ৯ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে। সময়মতো বীজ, সার কৃষকের হাতের নাগালে থাকায় এবার বোরোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসব জমি থেকে ৬৬ হাজার টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৬ হাজার হাইব্রিড, বাকি উফশি ২৮ ও ২৯ জাতসহ অন্যান্য ধান রয়েছে। 

বিভাগটি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ জমির বোরো ধানের শীষ বেরিয়েছে। কিন্তু চৈত্র মাসের শুরু থেকে উপজেলায় দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরম ও রাতে শীত অনুভূত হয়। এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপজেলার বিভিন্ন মাঠের ধান খেতে হঠাৎ করে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। যার কারণে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, আমার প্রায় কয়েক একর জমির বোরো ধানের শীষে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এখন আামি কী করব ভেবে পাচ্ছি না। একই অবস্থা আরও কয়েকটি গ্রামের কৃষক হাসেম আলী, হানিফ উদ্দিন, করিম উদ্দিন, জাহিদ আলী, শরবেশ আলী, জমির উদ্দিন রফিকুল ইসলামসহ অধিকাংশ কৃষকের। তাদের বোরো ধানে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে সদ্য বের হওয়া শীষ। 

নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষা ফেরুষার কৃষক কপুর উদ্দিন ২৫ শতক ও গোলজার হোসেনের এক বিঘা ধান ব্লাস্ট রোগে পুড়ে গেছে। কৃষক আব্দুল হানিফ উদ্দিন জানান, আমি সাড়ে চার বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছি। এর মধ্যে ১ বিঘা ২৮ জাতের ধানের শীষ শুকিয়ে গেছে। আমি নিজেই হতাশ হয়ে কৃষি অফিসের পরামর্শ না পেয়ে স্থানীয় দোকান থেকে নাটিভো নামের ছত্রাকনাশক ওষুধ কিনে স্প্রে করেছি। 

কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে না যাওয়ার কথা অস্বীকার করে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রশীদ বলেন, কোনো কৃষক এ অভিযোগ করতে পারবেন না। সবসময়ই তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

তিনি বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায়  ৯ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এর চেয়েও বেশি। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপজেলার দুই একটি ইউনিয়নে আড়াই হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে, যা প্রতিরোধে পরামর্শ অব্যাহত। 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর