ভালো নেই কুমিল্লার পাঁচ শতাধিক বাদ্য শিল্পী। যারা বাদ্য বাজিয়ে মানুষের বাড়িতে উৎসবের আমেজ আনেন তাদের বাড়িতে আজ আনন্দ নেই। করোনায় বিয়ে, পূজা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ। কমে গেছে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানও। তাই আমন্ত্রণ মেলে না তাদের। কাজ না থাকায় অভাব-অনটনে দিন কাটছে তাদের।
বিভিন্ন সূত্র মতে, জেলার দাউদকান্দি, মুরাদনগর, চান্দিনা, বরুড়া ও কুমিল্লা নগরীতে বাদ্য শিল্পীদের বসবাস। বেশি বাদ্য শিল্পীর বসবাস কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। এখানে দুই শতাধিক শিল্পী বসবাস করেন। দাউদকান্দির চাপাতলী, ধানুয়াখলা, পুটিয়া ও সদরে রয়েছে তাদের আবাস। বেশি ৩০ পরিবারের মতো চাপাতলী গ্রামে।
সরেজমিন চাপাতলী ও পুটিয়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, কেউ কেউ বাদ্য বাজানো ছাড়া কোনো কাজ শিখেননি। তবুও পেটের দায়ে দিনমজুরের কাজ নিয়েছেন। কেউ সেলুন দোকানে সহকারীর কাজ করছেন। যারা বয়স্ক তারা গ্রামের চা দোকানে বসে সময় কাটাচ্ছেন।
পুটিয়ায় বাদ্য শিল্পীদের খোঁজ নেওয়ায় কয়েকজন এগিয়ে এসে কথা বলেন। মলিন মুখে ফুটে ওঠে শুষ্ক হাসি। অনেক দিন বাদ্য যন্ত্র বের করেন না। সেগুলোতে ধুলাবালি জমে গেছে। আগ্রহ সহকারে সেগুলো বাজিয়ে শোনান। বাড়ির শিশুরাও বাদ্য বাজাতে পারেন।
পুটিয়া গ্রামের বাদ্য শিল্পী পরিমল চন্দ্র নট্ট বলেন, এই গ্রামে আগে ৪০ পরিবার বাদ্য বাজাতো। এখন ১০ পরিবার বাজায়। শত বছর ধরে আমাদের এই পেশা। আমি ৩৫ বছর ধরে বাদ্য বাজাই। আমার দল প্রধান বিদেশ নট্ট। করোনার পর থেকে অনুষ্ঠান কমে গেছে। কাজ নেই। দিনমজুরের কাজ করে টেনে টুনে চলছি। অনেকে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে।
আরেক শিল্পী দোলন চন্দ্র নট্ট বলেন, একটি দলে আমরা ৮-১০ জন থাকি। সাধারণত একদিনের অনুষ্ঠানে বাজাতে ১২/১৫ হাজার টাকা নেই। তা সকলে ভাগ করে নেই। বিয়ে ও পূজায় আমাদের বেশি ডাক পড়ে। এখন কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে আমরা কষ্টে সময় কাটাচ্ছি।
স্থানীয় শিক্ষাবিদ মতিন সৈকত বলেন, দিন দিন ঐতিহ্যবাহী পেশা হারিয়ে যাচ্ছে। তার উপরে করোনার আঘাত। অনেকে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে কষ্টে থাকা পরিবারগুলোর দিন ভালো কাটবে।
দাউদকান্দি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম খান বলেন, বাদ্য শিল্পীরা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত এই পরিবারগুলোকে সরকারের সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই