কোভিড-১৯ এর আঘাতে মৌলভীবাজারের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী মনিপুরী তাঁত শিল্পে ব্যাপক ধস নেমেছে। বিক্রি বন্ধ রয়েছে লাখ লাখ টাকার শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা, বিচানা চাদর, থ্রি-পিচসহ বিভিন্ন পণ্য।
আবার কেউ কেউ ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও জীবন জীবিকার তাগিদে কম দামে কিছু পণ্য বিক্রি করছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। কিন্তু এত কিছুর পরেও সরকারি তেমন বরাদ্দ নেই। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক পরিসংখ্যানও নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মৌলভীবাজারে বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে মনিপুরী কাপড় আকর্ষণীয় পণ্য। পর্যটকরা মূলত মনিপুরী পণ্যের মূল ক্রেতা। এছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে রফতানি করা হয় এ পণ্য। পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকায় প্রতিদিনই বেড়াতে আসতেন অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক। কিন্তু গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দেখা নেই। মৌলভীবাজারেও সরকারিভাবে পর্যটক আসা বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে, কমলগঞ্জের মনিপুরী তাঁত শিল্পের সুনাম দেশব্যাপী থাকলেও মৌলভীবাজার বিসিক শিল্পনগরীতে নেই এর কোনো পরিসংখ্যান।
তবে স্থানীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার মনিপুরী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং স্থানীয় প্রায় ৫০০ পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত। তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ এমনকি জীবিকা নির্বাহ করেন এই ব্যবসার আয় দিয়ে।
তাঁত উদ্যোক্তা সিতারা বেগম বলেন, আমিসহ অনেকেই ঋণ নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করেছি। মাসিক কিস্তি পরিশোধ ও জীবিকার তাগিদে ন্যায্য মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে কাপড় বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার কিছু কিছু কাপড় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের দেড় বছর হলেও এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো বরাদ্দ পাইনি।
তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত সুগেস সিংহসহ অনেকেই বলেন, করোনায় এ শিল্পের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছেন অনেকেই। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের সরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি। শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বিসিক মৌলভীবাজারের উপ-ব্যবস্থাপক মো. জোহুরুল হক বলেন, ঊর্ধ্বতন অফিস থেকে কখনো এ শিল্পের পরিসংখ্যান চাওয়া হয়নি। তাই আমরাও তথ্য সংগ্রহ করিনি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক জানান, করোনার প্রভাবে আগের চেয়ে চাহিদা কম, যার ফলে কম কাপড় তৈরি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শুধু মাত্র তাঁত শিল্পের সাথে জড়িতদের সহযোগিতা করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়নি। তবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে একটি তালিকা করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তাদের সহযোগিতা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই