নরসিংদীতে শহিদুল ইসলাম শহিদ নামে ৬৩ বছর বয়সের এক বৃদ্ধ টানা চার ঘণ্টা উত্তাল মেঘনায় সাঁতরেছেন। সোমবার সকাল ৮ টায় রায়পুরা উপজেলার মনিপুরা ঘাট থেকে শুরু হওয়া সাঁতার দুপুর ১২ টায় শেষ হয় নরসিংদী সদরের থানার ঘাট এলাকায় পৌঁছানোর মাধ্যমে। শহিদুল ইসলাম শহিদ (৬৩) পেশায় একজন কৃষক। তিনি রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের দড়ি বালুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানায়, বেশ কিছুদিন আগে বকুল মিয়া নামে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসক কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে রায়পুরা উপজেলার হাইরমারা ইউনিয়নের মনিপুরা ঘাটে আসেন ৪২ কিলোমিটার নদী সাঁতরে। এটা নিয়ে কয়েকদিন আগে গ্রামের চায়ের দোকানে কথা বলছিলেন শহীদুল ও গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি। সেখানে শহীদুল বলেন তিনিও মেঘনায় একটানা সাঁতার কাটতে পারবেন।
এসময় শফিক মিয়া নামে একজন ঘোষণা দেন তিনি যদি রায়পুরার মনিপুরা ঘাট থেকে নরসিংদী সদরের থানার ঘাটের ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব সাঁতার কেটে যেতে পারেন তাকে এক লক্ষ টাকা দিবেন। পরে জালাল মিয়া নামে আরেক গ্রামবাসী ঘোষণা দেন তিনিও ৫০ হাজার টাকা পুরষ্কার দিবেন। শহিদুলও সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে ঘোষণা দেন, পুরস্কারের দেড় লক্ষ টাকা তিনি বাড়ির পাশে নির্মাণাধীন মসজিদে দান করবেন। সবশেষ, সোমবার সকাল ৮ টার দিকে রায়পুরা উপজেলার হাইরমারা ইউনিয়নের মনিপুরা বাজারের ঘাট হতে তিনি সাঁতার শুরু করেন। টানা চার ঘণ্টা উত্তাল মেঘনার ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে দুপুর বারোটার দিকে পৌঁছান নরসিংদী সদরের থানার ঘাট এলাকায়। পরে গ্রামবাসী ও সেখানকার স্থানীয়রা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
কাউসার আহমেদ নামে স্থানীয় একজন বলেন, এই বয়সেও এই উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো । সাঁতার শুরুর সময় থেকে শেষ অব্দি আমি সাথে ছিলাম নৌকায়। পারবে না, নৌকায় ওঠে যাবে এমনটা মনে হয়নি ওনাকে দেখে। ১৫ কিলোমিটার সাঁতরে গন্তব্যে এসেও বলতেছে আরও সাঁতরাতে পারবে।
দড়ি বালুয়াকান্দি দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদ কমিটির সদস্য মিলন মিয়া বলেন, আমরা গ্রামবাসীসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিয়ে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু অর্থের অভাবে পিলার করার পর আর কাজ করতে পারছিলাম না। শহিদ মিয়া আগে মসজিদের জন্য নিজের জমিও দান করেছে। এখন পুরষ্কারের টাকা দিয়ে ছাদ ঢালাই এর সহযোগীতা করছে। তার এই মহৎ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
বৃদ্ধ কৃষক শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, আমার ইচ্ছা ছিলো আমি মেঘনা পাড়ি দিবো। সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে আমার। কোনো সমস্যা হলে উদ্ধারের জন্য সাথে নৌকা ছিলো। আমার কোনো সমস্যা হয়নি। আরও সাঁতরাতে পারবো এমন মনে হয়েছে। এলাকার মসজিদটির ছাদ ঢালাই অর্থের অভাবে বন্ধ ছিলো। আমি পুরষ্কারের টাকা মসজিদে দান করেছি যাতে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করতে পারে। আমি সমাজের বিত্তবানদের মসজিদ নির্মাণে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল