কক্সবাজারের ইনানী, হিমছড়ি, সেন্টমার্টিনসহ পর্যটন স্পটগুলোর সর্বত্রই পর্যটকের ঢল নেমেছে। দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের পদচারণায় এখন মুখরিত কক্সবাজার। কানায় কানায় পরিপূর্ণ সৈকতের পয়েন্টগুলো।
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এসব পর্যটকের আগমন ঘটে সৈকতের বিভিন্ন স্পটে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ছুটির সঙ্গে শুক্র ও শনিবারের বন্ধ। টানা তিন দিনের এই ছুটিতে কক্সবাজারে ছুটে আসেন লাখ লাখ পর্যটক। সমুদ্রস্নান থেকে শুরু করে বালিয়াড়িতে বিজয় দিবসকে ঘিরে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতেছেন তারা।
ছুটির দিনে মন ভরে উপভোগ করছেন পর্যটকরা। অনেকে সৈকতের বালিয়াড়িতে মুক্তিযুদ্ধের নানা চিত্র এঁকে স্মরণ করছেন সেই একাত্তরের স্মৃতিকথা।
এদিকে প্রায় ১০ মাসের লকডাউন আর নানা সংকট কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্রসৈকতে আবারও জমে উঠতে শুরু করেছে পর্যটকের আনাগোনা। কিছু কিছু পর্যটন স্পটে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে পর্যটকদের জন্য। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছাড়াও চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধবিহার, বোটানিক্যাল গার্ডেন, মাথিনের কূপ, হিমছড়ি, আদিনাথ মন্দির, পাটুয়ারটেক, দরিয়ানগর, ইনানী পাথরের সৈকত, জালিয়ার দ্বীপসহ সবগুলো পর্যটন স্পট এখন পর্যটকদের পদভারে মুখরিত।
মার্কেটগুলোতেও বাড়তি ভিড় রয়েছে। ঝিনুক মার্কেট, বার্মিজ মার্কেট ও শুটকি মার্কেটসহ সব দোকানে বেচাকেনার ধুম পড়েছে। রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের আগমনে উচ্ছ্বাসিত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। আগত এসব পর্যটকের নিরাপদ ভ্রমণে মাঠে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। তবে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক ব্যবহারে পর্যটকদের উদাসীন দেখা গেছে।
গাজীপুর থেকে সপরিবারে আসা পর্যটক সুরাজ উদ্দিন বলেন, ‘তিন দিনের ছুটি রয়েছে। আর এ ছুটি উপভোগ করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। বাচ্চাদের নিয়ে সাগরজলে সাতার কেটেছি। অনেক মজা করেছি।’
কুমিল্লার নতুন দম্পতি রায়হান-তাজকিয়া দুদিনের জন্য কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। তারা বলছেন, ‘অনেকদিন ধরে কক্সবাজার আসার সিদ্ধান্ত ছিল। অবশেষে দুইদিনের জন্য কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি। অনেক মজা করছি। বিজয় দিবসে সৈকতে অনেক পর্যটকের সমাগম দেখে খুবই ভালো লাগছে।’
সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে কথা হয় সিলেটের বালাগঞ্জ থেকে আসা পাঁচ বন্ধু, বাবু, আরমান, শাহরিয়ার, জুলহাস ও আনাফের সঙ্গে। তারা জানান, দুই বছর পর পাঁচ বন্ধু মিলে কক্সবাজার এসেছেন। করোনা মহামারির জন্য এতদিন তারা আসার চেষ্টা থাকলেও লকডাউনসহ নানা কারণে আসতে পারেনি। এবার এসে তারা খুব ভালো সময় পার করছেন।
প্রতিদিন আসছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্টহাউসে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কোনো কক্ষ খালি থাকছে না। এসব হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউজে বর্তমানে ৯৫ শতাংশ থেকে শতভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সুলতান বলেন, ‘কক্সবাজার শহরে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস রয়েছে। লকডাউন আর করোনার কারণে সবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সৈকত খুলে দেওয়ার পর পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। এখন আমাদের হোটেল মালিকরা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা পর্যটকদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি।’
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘করোনাকালীন হোটেল মালিকসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রভাব কমে যাওয়ার কারণে সৈকত উন্মুক্ত ও শীত মৌসুমে পর্যটকের আগমন ঘটছে। এতে করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন সবাই। সামনে স্কুল-কলেজের পরীক্ষা শেষে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনের লক্ষ্যে হোটেলগুলোতে অগ্রিম প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। অনেক হোটেলে অগ্রিম বুকিং হচ্ছে। সবমিলিয়ে পর্যটন ব্যবসা ভালোই বলতে পারি।’
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ায় কক্সবাজারে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটক আসছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতের সব স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের টিম টহল ও নজরদারি রাখছে।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ